অর্থনীতি

ঢাকায় এক আঁটি ঘাসের দাম ৫০ টাকা

ঢাকায় এক আঁটি ঘাসের দাম ৫০ টাকা

পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ঘাস ও বিচালি বিক্রির খণ্ডকালীন দোকান দিয়ে বসেছেন একদল। এসব দোকানে বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ঘাস ও বিচালি। এক আঁটি কাঁচা ঘাস কিনতে কোথাও কোথাও ক্রেতাদের ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে। কোনো কোনো বিক্রেতা শীষসহ ধান গাছ কেটে এনে বিক্রি করছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি অঞ্চলেই গরুর হাটের পাশে এবং মহল্লার গলিতে গলিতে ঘাস ও বিচালি বিক্রির দোকান রয়েছে। অঞ্চল ও মানভেদে এক আঁটি কাঁচা ঘাস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়। কাঁচা ধান গাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। আর বিচালি বিক্রি হচ্ছে ১৫-৩০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিচালির থেকে কাঁচা ঘাস ও ধান গাছের দাম বেশি কারণ এগুলোর চাহিদা বেশি। কাঁচা ঘাস ও ধান গাছ গরু খায়ও বেশি। আর শুকনা বিচালি গরু কম খায়। বিচালির সঙ্গে ভুসি মিশিয়ে দিলে গরু খায় ভালো। সেক্ষেত্রে খরচ আরও বেড়ে যায়। তাই দাম বেশি হলেও কাঁচা ঘাস ও ধান গাছে ক্রেতাদের লাভ বেশি।

অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, এবার বাজারে গরুর দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। কিন্তু গরুর খাবারের দাম বেশি। গত বছর যে ঘাস ৩০ টাকায় পাওয়া গেছে, এবার সেই ঘাস ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আবার গত বছর ভুসির কেজি ছিল ৭০-৮০ টাকা, এবার ১০০ টাকা। গত বছর যে বিচালি ১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে, এবার তার দাম ২০ টাকা।

Advertisement

রামপুরায় শীষসহ ধান গাছ বিক্রি করা খায়রুল ইসলাম বলেন, আমি রিকশা চলাই। তবে তিন বছর ধরে কোরবানির ঈদের সময় ঘাস, খড় বিক্রির ব্যবসা করছি। ঈদের ৩-৪ দিন ভালোই বিক্রি হয়। এসময় রিকশা চালানোর দরকার পড়ে না। খাটনি কম, আয় বেশি।

তিনি বলেন, বুধবার (৪ জুন) ৩০০ আঁটি ধানগাছ নিয় এসেছিলাম। এখন ৫০টির মতো আছে। এগুলো বিক্রি হলে আবার নতুন করে নিয়ে আসবো। কাঁচা ধান গাছ গরু খায় ভালো, তাই এর চাহিদাও বেশি।

শীষসহ ধান গাছ নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক আঁটি ধান গাছ ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ এক আঁটি ধান গাছ থেকে যে ধান পাওয়া যাবে, তার থেকে গাছের দাম এখন বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে চাষিরা ধান গাছ কেটে বিক্রি করছেন।

বাড্ডায় কাঁচা ঘাস কোথাও ৩০ টাকা আঁটি, কোথাও ৪০ টাকা আবার কোথাও ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মেরুল বাড্ডা পশুর হাটের পাশে ৪০ টাকা আঁটি কাচা ঘাস বিক্রি করা জহিরুল বলেন, কোরবানির ঈদের সময় ঘাস ও খড়ের ব্যবসা ভালো হয়। আমি ভ্যানে সবজি বিক্রি করি। কোরবানির ঈদের সময় সবজি বিক্রির থেকে ঘাস বিক্রি করে আয় ভালো হয়। তাই কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদের সময় ঘাস বিক্রি করছি।

Advertisement

বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুধবার থেকেই কোরবানির গরু বিক্রি ভালো হচ্ছে। ফলে আমাদের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আজ সকাল থেকে খুব ভালো বিক্রি হয়েছে। ৫০০ আঁটির মতো বিক্রি করেছি। শুক্রবারও ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, হাট থেকে গরু বিক্রি হওয়ার পর আমাদের বিক্রি ভালো হয়। গরু হাটে থাকলে আমাদের তেমন বিক্রি হয় না। কারণ ব্যাপারীরা গরুর সঙ্গে গ্রাম থেকে খাবারও নিয়ে আসে।

ঘাস কোথা থেকে নিয়ে আসেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তিনজন ময়মনসিংহ থেকে ঘাস নিয়ে আসছি। আমি বাড্ডায় বিক্রি করছি। বাকি দুজনের মধ্যে একজন শাহজানপুর এবং একজন খিলগাঁওয়ে বিক্রি করছে।

বাড্ডায় ২০ টাকা আঁটি বিচালি বিক্রি করা মো. আসলাম বলেন, বিচালারি সঙ্গে আমরা ভুসিও বিক্রি করছি। আল্লাহর রহমত বিক্রি ভালো হচ্ছে। এক আঁটি বিচালি ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি করছি। ভুসির কেজি ১০০ টাকা। আমরা খুব বেশি লাভ করছি না, অল্প লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছি।

গরুর জন্য ঘাস কেনা রামপুরার বাসিন্দা মো. মামুন হোসেন বলেন, হাট থেকে গরু যে দামে কিনেছি তাতে খুশি, কিন্তু গরুর খাবের দামে খুশি হতে পারছি না। এক আঁটি কাচা ঘাস ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। ভুসির কেজি ১০০ টাকা। অবশ্যই দাম বেশি নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। গরুকে তো না খাইয়ে রাখা যায় না। তাই বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে।

প্রায় একই ধরনের কথা বলেন বাড্ডা থেকে ঘাস ও বিচালি কেনা আসলাম শেখ। তিনি বলন, এবার হাটে গরুর দাম তুলনামূলক কম। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও গরুর খাবারের দাম বেশি। এমনকী গত বছরের তুলনায় এবার সব খাবারের দাম বেশি। বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে গরুর খাবার কিনতে হচ্ছে। ১০ আঁটি কাঁচা ঘাস কিনেছি ৪০০ টাকা দিয়ে। আর ১০ আঁটি বিচালি কিনেছি ২০০ টাকা দিয়ে। বিচালি ও ঘাস একসঙ্গে মিশিয়ে দিলে গরু খায় ভালো। যদি দরকার পড়ে কাল আবার কিছু কিনতে হবে।

এমএএস/এমএএইচ/এমএস