ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের গ্রামের বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ায় চলছে শোকের মাতম। তাদের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে গোটা এলাকায়।
Advertisement
এর আগে শনিবার (২৮ জুন) সকালে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে এ দুর্ঘটনায় চারজন মারা যান।
স্থানীয় ও স্বজনরা জানান, সমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার একটি রিজার্ভ করা বাসে ওঠেন নেতাকর্মীরা। হামদান এক্সপ্রেস নামে পরিবহনটি অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে যাত্রা করে। ভোরে এক্সপ্রেসওয়ের সিংপাড়া-নওয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়।
আরও পড়ুনঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ৪এতে ঘটনাস্থলে ইসলামী আন্দোলনের যশোর নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন (৬৫), ভাগনে মধুগ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে জিল্লুর রহমান (৬৫), শেখহাটি এলাকার আব্দুল হালিম মোস্তফা (৫৫) ও বাসচালকের সহকারী পাগলাদাহ গ্রামের মো. বাপ্পির ছেলে হাসিব উদ্দিন (৩২) মারা যান। এসময় আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন।
Advertisement
দুপুরে পাগলাদহ গ্রামের পূর্বপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ওপরে শামিয়ানা টাঙাচ্ছেন কয়েকজন যুবক। কেউ কবর খুঁড়ছেন। কেউবা কয়েকটি বড় হাঁড়িতে পানি গরম করছেন। সড়কের ওপরে সারিবদ্ধভাবে রাখা চেয়ারে বসে আছেন গোটা বিশেক মানুষ। বাড়ি ভিতরে নারীদের আহাজারিতে শোকাবহ পরিবেশ। নিহত জালালের বাড়িতে বসে আহাজারি করতে দেখা যায়, বাসটিতে থাকা সংগঠনের এক কর্মী আইতুল্লাহকে। তার বাড়িও পাগলাদাহ গ্রামে। বাসে আহত হওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বাড়িতে চলে আসেন।
আহতুল্লাহ জানান, ‘সমাবেশ যোগ দেওয়ার জন্য ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে হামদান এক্সপ্রেস নামে একটি পরিবহন রিজার্ভ করা হয়। বাসে থাকা বেশিরভাগ নেতাই বয়স্ক। বাসে উঠে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। বাসটি সিংপাড়া-নওয়াপাড়া পৌঁছালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।’
নিহতের জালালের বড়ভাই মাকসুদুর রহমান জানান, ‘এলাকায় শোকের মাতম চলছে। আহতদের স্বজনেরা ঢাকার পথে যাচ্ছে। আর নিহতের মরদেহ যশোরে আনা হচ্ছে। আহত ও নিহতের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’
এদিকে দুর্ঘটনায় প্রথমে গুরুতর আহত হন হামদান এক্সপ্রেসের হেলপার হাসিব। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একটি দুর্ঘটনায় ছোটবেলায় বাবাকে হারান হাসিব। গার্মেন্টস কাজ করে হাসিবকে বড় করেন মা শায়লা বেগম। এখন তিনিও বয়সের ভারে নানা রোগে অসুস্থ। অসুস্থ মা, স্ত্রী ও আড়াই বছরের একটা কন্যা শিশু রয়েছে তার। পরিবারের হাল ধরতে কিছুদিন আগে হেলপারের চাকরি নেন তিনি। দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা।
Advertisement
হাসিবের শাশুড়ি মর্জিনা বেগম বলেন, ‘হাসিবই ছিল সব। এভাবে তার প্রাণ দিতে হবে যদি জানতাম তাহলে বাসে চাকুরি নিতে দিতাম না। আমাগের এখন কী হবে। মেয়েটার কী হবে? তারে হারিয়েতো আমরা সাগরে পড়ে গেলাম।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, ‘গণমাধ্যমে শুনেছি যশোরের চারজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের সদস্যরা নিহতের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এক ইউনিয়নে চারজনের মৃত্যুতে শোকের মাতম বইছে।’
মিলন রহমান/আরএইচ/জেআইএম