• হাটের ইজারাদার জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা• হাসিলের কাগজ থাকায় ভারতীয় এসব গরু জব্দের পরও ব্যবস্থা নিতে পারে না বিজিবি• এভাবে ভারতীয় গরু আসতে থাকলে ক্ষতির মুখে পড়বেন দেশীয় খামারিরা
Advertisement
সীমান্তে কড়াকড়ির পরও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার ও ছাতক সীমান্ত এলাকায় বেড়েছে পশু চোরাচালান। বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে মেঘালয়ের দুর্গম সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে আসছে অসংখ্য গরু। আর সেই গুরুগুলোকে হাসিলের মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছে পশুর হাট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় অবৈধ গরু পরিবহনের জন্য নৌকার তলদেশে কাঠের পাটাতন ও দু’পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ নৌকা। যেটাতে করে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদী পথ দিয়ে অবৈধ গরু এনে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা ও ধর্মপাশা পশুরহাটে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত বোগলা বাজার পশুর হাট। এই হাটটিতে দেশি গরু বিক্রি করার জন্য প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিয়ে চলতি বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই হাটে প্রতিনিয়ত সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসা ভারতীয় অবৈধ গরুর বৈধতা দিয়ে সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে পাঠানো হচ্ছে।
Advertisement
সীমান্তবর্তী এই বোগলা বাজার থেকে ১ মে বিশেষ নৌকায় করে ধর্মপাশা পশুর হাটে যাচ্ছিল ৯০টি ভারতীয় গরু। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুরমা নদীর সাহেব বাড়ি ঘাট এলাকা থেকে সেই গরুবোঝাই নৌকাটি আটক করে বিজিবি। পরে সেই গরুগুলো সুনামগঞ্জ বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের মাঠে বেঁধে রাখা হয়। যা দেখলে মনে হবে ছোটখাটো একটি পশুরহাট।
আরও পড়ুন- শেরপুরে সড়কের পাশে পশুর হাট, যানজটে ভোগান্তি মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি, মধ্যবিত্তদের ভরসা ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল’ সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে অবৈধ গরু, হাসিলে হচ্ছে বৈধতবে গরুগুলো দেশি নাকি ভারতীয় সেটা যাচাই বাছাই করতে খবর দেওয়া হয় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরকে। পরে একটি টিম এসে গরুর শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে বিজিবিকে জানায় মেঘালয়ের গরুর পা ছোট, শিং ছোট, কপালে দাগ, মসৃণ পশমসহ দশটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে আটক গরুগুলোর মধ্যে। এগুলো মেঘালয়ের গরু। পরে বিজিবি সেই গরুগুলো প্রকাশ্যে নিলাম দিতে চাইলে সেখানে বাধে চরম বিপত্তি। কারণ গরুগুলোর হাটের বৈধ কাগজ থাকায় আইনের গ্যাড়াকলে পড়ে বিজিবি। পরে সেই গরুগুলোকে নিয়মিত মামলা দিয়ে হাট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তবে হাটের ইজারাদারদের পক্ষ থেকে গরু নিতে আসা সুবীর আহমেদ বলেন, প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা কীভাবে বুঝলেন এগুলো ভারতীয় গরু? গরুগুলো ভারতীয় হলেও সমস্যা নেই।
তবে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, জব্দকৃত গরুগুলো ভারতীয়। আর বোগলা বাজার এই গরুগুলোকে বৈধতা দিচ্ছে। এভাবে ভারতীয় গরু আসতে থাকলে দেশীয় খামারিদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
Advertisement
তবে বাজারের ইজারাদার ও জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, মূলত বোগলা বাজার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। কিছু লোক বাজারের সুনাম নষ্ট করার জন্য এসব করছে।
তিনি আরও বলেন, বিজিবি যে ৯০টি গরু জব্দ করেছিল সেগুলোর বিষয়ে আমি কিছু জানি না, কারণ আমি বাড়িতে বেশি থাকি না।
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমন দোজ্জা জাগো নিউজকে বলেন, বোগলা বাজার সম্পর্কে আমার ধারণা কম। তবে এটা জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ইজারা নিয়েছেন বলে শুনেছি। যদি সেই বাজারে ভারতীয় গরুকে বৈধতা দেওয়া হয় বলে শুনি তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে অভিযোগ রয়েছে, জেলার দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার বাগানবাড়ী, গাছগড়া, মোকামবাড়ী, ভাঙ্গাপাড়া, মাঠগাঁও, নরসিংপুর, শ্রীপুর, সামারগাঁও, কলাউড়া, বাঁশতলা, চৌধুরীপাড়াসহ মোট ৩০টি স্পটে রাতের আঁধারে সীমান্তের গোপন রুট দিয়ে গবাদিপশু নিয়ে আসে চোরাকারবারিরা। সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসায় প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরা।
খামারি হৃদয় মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, যেভাবে বোগলা বাজার অবৈধ গরুকে বৈধতা দিচ্ছে এটা দেশের জন্য ক্ষতিকর, আমাদের খামারিদের জন্যও ক্ষতিকর।
দোয়ারা বাজারের বাসিন্দা হুমায়ূন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন রাতে দিনে নৌকা ও গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বোগলা বাজারের হাসিলের কাগজ নিয়ে অবৈধ গরু বৈধ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
খামারি সোনাফর আলী জাগো নিউজকে বলেন, দেশীয় গরু বাজারে তুলে আমরা তেমন একটা লাভ পাচ্ছি না। কারণ বাজারগুলোতে ভারতীয় গরু রয়েছে, যেগুলো দেশি গরুর থেকে দাম অনেক কম।
তবে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাকারিয়া কাদির জাগো নিউজকে বলেন, সীমান্তের কাছে বোগলা বাজার পশুর হাট থাকায় চোরাকারবারি সহজেই গরুগুলোকে বাংলাদেশি বৈধতা দিয়ে দিচ্ছে। তবে সীমান্ত এলাকা থেকে গরুর হাটটি যাতে সরানো হয় সেই বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। পাশাপাশি ঈদ সামনে রেখে চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি টহল জোরদার করেছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ মাসে দোয়ারা বাজার সীমান্ত এলাকা থেকে সাড়ে ৪০০ ভারতীয় অবৈধ গরু জব্দ করা হয়েছে।
এফএ/এএসএম