রাজনীতি

গুমে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি সালাহউদ্দিনের

গুমে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি সালাহউদ্দিনের

তাকে গুমের ঘটনায় ন্যায়বিচার দেখতে চান বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিচারে যা সাব্যস্ত হবে, তিনি তা মেনে নেবেন। তবে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা চান তিনি।

Advertisement

মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরের দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ জমা দেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। গুমের বিষয়ে আনা অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে অন্য যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন সালাহউদ্দিন।

Advertisement

বিএনপির এই নেতা সাংবাদিকদের বলেন, গুমের অভিযোগ জানাতে আরও আগেই তার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে আসার কথা ছিল। বিভিন্ন রকমের ব্যস্ততাসহ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে একটু দেরি হয়েছে।

আরও পড়ুন

ট্রাইব্যুনালে হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সালাহউদ্দিনের গুমের অভিযোগ সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও স্ত্রী-সন্তানের ২৩ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

গুমের ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তদন্তে আরও অনেক আসামির নাম বের হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, বিচারে ন্যায় দেখতে চান তিনি। আইন যেভাবে মনে করবে, বিচারে যেভাবে সাব্যস্ত হবে, তিনি সেটাই মেনে নেবেন। তবে তিনি চান, জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সাজা হোক। কিন্তু কোন সাজা হবে সে ব্যাপারে আইন-আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।

Advertisement

সালাহউদ্দিন বলেন, গত ফ্যাসিস্টের শাসনামলে তার মতো যারা গুমের শিকার হয়েছেন, যারা পুলিশের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, যারা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন, যারা বিভিন্নভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, বিভিন্নভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছেন, সবকিছুর অভিযোগে যেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়।

ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম যাতে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়, সেজন্য তদন্ত দল বাড়ানোসহ লজিস্টিক সহযোগিতা যেন সরকার দেয়, সেই আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন।

তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

বর্তমানে বিচার বিভাগ স্বাধীন বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তার আশা, স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়া চালু থাকবে। সবাই যেন দেখতে পায়, সুবিচার নিশ্চিত হচ্ছে, কোনো পক্ষপাত হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম মানুষ সরাসরি দেখতে পাচ্ছে, এটা দেশের জন্য নজির স্থাপন করেছে।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তখন অভিযোগ করেন। অন্যদিকে, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধার করে। ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় স্থানীয়দের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়।

সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

এফএইচ/এএমএ/এমএস