সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বেস্টসেলিং থ্রিলার লেখক জেমস প্যাটারসন সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাদের নতুন রাজনৈতিক থ্রিলার উপন্যাস ‘দ্য ফার্স্ট জেন্টেলম্যান’ নিয়ে কথা বলেছেন। জানা গেছে, বইটিতে যেমন আছে হোয়াইট হাউজের উত্তেজনা, তেমনই উঠে এসেছে দায়িত্ববোধ ও ব্যক্তিগত সংকটের গল্প। সেঞ্চুরি প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত বইটি এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
Advertisement
‘দ্য ফার্স্ট জেন্টেলম্যান’ উপন্যাসের গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ম্যাডেলিন রাইট ও তার স্বামী কোল রাইট, যিনি একজন সাবেক আমেরিকান ফুটবল তারকা ছিলেন। কোল রাইট এক সময়ের এক চিয়ারলিডার হত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হন।
এই চরিত্রটি বিল ক্লিনটনের নিজের অবস্থানের প্রতিফলনও বটে। কারণ ২০১৬ সালের নির্বাচনে যদি হিলারি ক্লিনটন জয়ী হতেন, তবে হয়তো তিনিই হতেন ‘ফার্স্ট জেন্টেলম্যান’।
ক্লিনটন বলেন, হোয়াইট হাউজে থাকাকালীন আমি যে শুধু রিপাবলিকানদের অভিশংসন প্রচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছিলাম তা নয়। বরং নানা বিতর্কিত ঘটনার কারণে আমাদের খুব কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। তখন আমার মনে হতো- যারা আমাকে নিয়ে খবর প্রকাশ করছেন, তাদের চোখে আমি যেন বাস্তব চরিত্র না, বরং একটি গল্পের অংশ ছিলাম। এই উপন্যাসে আমরা সেসব অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
Advertisement
তবে ‘দ্য ফার্স্ট জেন্টেলম্যান’ কেবল একটি আদালতকেন্দ্রিক নাটকীয় উপন্যাস নয়; বরং এটি সম্ভবত ইতিহাসের প্রথম কোনো রোমাঞ্চকর উপন্যাস, যার কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ও ব্যয় নিয়ে বিশদ বিতর্ক।
শেষ পর্যন্ত, বইটির কেন্দ্রে যে প্রশ্নটি রয়েছে তা হলো- প্রেসিডেন্ট রাইট কি তার স্বামীর প্রতি ন্যায্য হবেন, নাকি দেশের দায়িত্বকেই প্রাধান্য দেবেন? ক্লিনটনের কথায়, আমি জানি, যখন আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হয়, তখনও আপনাকে কাজ করতে হয়।
এদিকে, গল্পের মূলে প্রেসিডেন্ট দম্পতির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে দুজন সাংবাদিক- ব্রেয়া কুক ও গ্যারেট উইলসন, যারা খোঁজ করছেন ১৭ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া চিয়ারলিডার সুজান বোনানোর প্রকৃত রহস্যের। প্যাটারসন বলেন, সাংবাদিকরা সত্যের পেছনে ছুটে, এটা আমরা চাই। যদিও কখনও কখনও তারা যেটা পায়, সেটা তারা ডিজার্ভ করে।
ক্লিনটনও একমত, সত্ সাংবাদিকরা সবসময় টিকে থাকবেন, এমনকি ভুল স্বীকার করেও যদি সত্য বলার সাহস থাকে।
Advertisement
এই বই শুধুই একটি আদালত-ভিত্তিক থ্রিলার নয়। এটি সম্ভবত ইতিহাসের প্রথম থ্রিলার যেখানে মার্কিন ঋণ ও ব্যয়ের ভারসাম্য আনার পরিকল্পনা কাহিনির কেন্দ্রে। ক্লিনটন বলেন, ভালো গল্প বলার পাশাপাশি পাঠকদের কিছু শেখানোও সম্ভব। যেমন এই বইয়ে বাজেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে।
উপন্যাসটি নিয়ে কাজ শুরুর সময় প্রথম খসড়া খুবই দুর্বল ছিল বলে স্বীকার করেন প্যাটারসন। চরিত্রগুলো বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। ক্লিনটন এক রাতে ফোন করে বলেন, আমি কোনো চরিত্রকে নিয়েই কিছু অনুভব করছি না। এরপর তারা গল্পে গভীরতা যোগ করেন।
তাদের যৌথ রচনার সাফল্যের পেছনে রয়েছে বাস্তব জগতকে জটিল ও ধূসর দৃষ্টিতে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। প্যাটারসন বলেন, আমরা দুজনেই বিশ্বাস করি দুনিয়া সাদা-কালো নয়, বরং অনেক স্তরের, অনেক স্তরের।
এর আগে ২০১৮ সালে এই জুটির লেখা ‘দ্য প্রেসিডেন্ট ইজ মিসিং’ বিশ্বজুড়ে ৩০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে ও ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘দ্য প্রেসিডেন্টস ডটার’ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল।
বিশ্ব রাজনীতির এই উত্তাল সময়ে, একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও এক থ্রিলার লেখকের লেখা এই উপন্যাস হয়তো বর্তমান ও ভবিষ্যতের নেতাদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করে।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ