দেশজুড়ে

‘চিকন’ তকমায় দাম হারায় চরের গরু

‘চিকন’ তকমায় দাম হারায় চরের গরু

রাজশাহীর পদ্মা পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা চর মাঝারদিয়া, চর খিদিরপুর ও চর আষাড়িয়াদহের বিস্তীর্ণ চরের নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে মাঠভরা গরু আর সংগ্রামী খামারিদের মুখচ্ছবি। বছরের পর বছর গরু লালন-পালন করে কোরবানির ঈদে বিক্রি করে সংসারে হাসি ফোটানোর আশায় বুক বাঁধেন তারা। তবে এবারের ঈদ তাদের মনে এক অনিশ্চয়তার ছাপ ফেলেছে।

Advertisement

চরের খামারিরা মনে করছেন, বাজারে গরুগুলোর উপযুক্ত দাম হচ্ছে না। শহরের ওষুধ খাওয়ানো মোটা-তাজা গরুর কাছে প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া স্বাস্থ্যবান গরু দামের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।

চরের খামারিদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, যেখানে গরু চরিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে বড় করেন, সেখানে শহরের হাটে সেই গরুর যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। চরের গরু তুলনামূলকভাবে চিকন কারণ তারা ওষুধ বা কৃত্রিম খাদ্য ছাড়াই বেড়ে ওঠে। অথচ বাজারে কৃত্রিমভাবে মোটা করা গরু যাদের শরীরে মিশে থাকে ফার্মের ওষুধ, ইনজেকশন ও কৃত্রিম খাবার। এগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। চরের গরুগুলো মোটা না হলেও সুস্থ ও প্রাণবন্ত। সারাদিন চরে ঘুরে বেড়ানো, ঘাস-খৈল খাওয়া এ গরুগুলো বাজারে গিয়ে ‘চিকন’ তকমায় দাম হারায়।

আরও পড়ুন : মাংস সুস্বাদু, তাই বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বরিন্দা গরু

চর মাঝারদিয়ার কৃষক হোসেন আলী বলেন, সাড়ে তিন বছর হইল গরুটা লইয়া আছি। খড়-খৈল, ভূষি, লবণ সব কিনতে ধার করলাম। আশা ছিল লাখ টাকা পাবো। এখন গরুর দাম নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। আমার গরু সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবো তো?

Advertisement

চর খিদিরপুরের যুবক খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার গরু দেখতে লম্বা ও স্বাস্থ্যবান। কিন্তু শহরের লোক কয়, এইটা চিকন ভালো খাওয়ানো হয়নি। গরুর স্বাস্থ্য কেউ বুঝে না, সবাই ওজন দেখে। শহরের মানুষ শুধু মোটা গরু খোঁজে। যে কারণে আমাদের হাটে গিয়ে হতাশ হতে হয়।

চর আষাড়িয়াদহের নারী খামারি জরিনা বেগম বলেন, ঘরের মতো মানুষ কইরা বড় করছি গরুটা। হাটে গেলে কয়, এইটা ছোট, শুকনা। দাম তো দেয় না, উল্টো মনটা ভাঙায় দিয়া যায়। এবার কী হবে বুঝতেছি না।

চরবাসীরা জানান, হাটে গরুর মূল নিয়ন্ত্রণ থাকে দালালদের হাতে। তারা প্রকৃত দাম দেয় না বরং কম দামে কিনে শহরের দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে।

চর আষাড়িয়াদহের রাসেল বলেন, আমরা গরু পালি শহরের মানুষ খায়। কিন্তু দাম পাই না ৫০ ভাগও। দালালের খপ্পরে না পড়লে আমাদের কোরবানি হয় না বরং আমরা নিজেরাই কোরবানি হয়ে যাই।

Advertisement

চর খিদিরপুরের বৃদ্ধ মালেক শেখ বলেন, জমিন নাই, শুধু দুইটা গরু পালছি। ভেবেছিলাম ঈদে বেচে ঘর তুলব। এখন মনে হয় স্বপ্নটাই বেইচা দিছি। গরুর দাম একেবারে কম। দালালরা এসে বলে এত কম দাম যে মনে হয় এতদিন ধরে গরু পালন করে লসই হইছে।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আতোয়ার রহমান বলেন, রাজশাহীর তিনটি চরে এবার মোট পশু রয়েছে ৩২ হাজার ৩৬০টি। এরমধ্যে গরু রয়েছে ১৮ হাজার ৫০০, মহিষ ১৭৬০, ভেড়া ৪৯০০ ও ছাগল রয়েছে ৭২০০টি। এগুলো কুরবানির বাজারে ভালো দাম পবে। রাজশাহী ও আশপাশের জেলায় কুরবানির সময় চরের গরু ও ছাগলের বেশ চাহিদা রয়েছে।

সাখাওয়াত হোসেন/এএইচ/জেআইএম