ময়মনসিংহে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘর, দোকানপাট, কাঁচাবাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে ময়লাযুক্ত পানি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
Advertisement
তারা বলছেন, প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ড্রেন নির্মাণ ও খাল খননকাজে মোটা অংকের টাকা হরিলুট করা হয়েছে। ফলে প্রতিবছর কার্যক্রম চললেও ফলাফল শূন্য।
রোববার (১ জুন) ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এতে নগরীর সানকিপাড়া, আকুয়া, গোলকিবাড়ী, বলাশপুর, খাগডহর, চরপাড়া, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, বদরের মোড়, ধোপাখলা, কাশর মসজিদের মোড়, জেলা খানা রোড়, আনন্দ মোহন কলেজ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সারাবছর নগরীর বিভিন্ন সড়কে ড্রেনের উন্নয়ন কাজ করা হয়। প্রতিবছর খাল পরিষ্কারও করা হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা মোটা অংকের টাকা ব্যয় করছেন। অথচ তা কোনো কাজেই আসছে না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে।
Advertisement
নগরীর আকুয়া মোড়লবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় দুপুর পর্যন্ত হাঁটুপানি রয়েছে। পাশেই সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পুরোনো কার্যালয়। সেখানেও হাঁটুপানি জমে গেছে।’
জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন গোলকিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ড্রেন পরিষ্কার না রাখার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আজও স্বল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এখনো অনেক বাসাবাড়ির ভেতর পানি রয়েছে।’
আবহাওয়া অফিস ময়মনসিংহের উচ্চ পর্যবেক্ষক নির্মল চন্দ্র মজুমদার বলেন, রোববার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আরও কমে আসবে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘নগরীতে অনেকগুলো ড্রেনের পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আবার নতুন করে ১২০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। এগুলো শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এবছর কিছুটা জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকলেও সামনের বছর সুফল পাবেন নগরবাসী।’
Advertisement
এর আগে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল ‘ড্রেন-খালের অবস্থা বেহাল, ময়মনসিংহবাসীকে ভোগাবে ‘বর্ষা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে জাগো নিউজ। এতে বর্ষা মৌসুমে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্ষা মৌসুমে নগরবাসী ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, খালগুলো এখনো খননসহ পরিষ্কার করার কাজের কোনো ফলাফল নেই। অনেক এলাকায় ড্রেন নির্মাণ বন্ধ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনেক ঠিকাদার ড্রেন ও সড়ক নির্মাণ কাজ অর্ধেক রেখে গা-ঢাকা দিয়েছেন। ফলে কিছু এলাকায় ঢিলেঢালাভাবে কাজ চললেও বেশিরভাগ কাজ বন্ধ রয়েছে।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ড্রেনের নোংরা পানি খুঁড়ে রাখা সড়কে উঠবে। পাশাপাশি খুঁড়ে রাখা সড়কে জমবে পানি। সবমিলিয়ে নগরীতে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে বিগত কয়েক বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল খাননে কোটি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের চিত্রও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
এর প্রমাণ মেলে গত ২০ মে। ওইদিন সকাল পৌনে ১০টা থেকে ময়মনসিংহে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। চলে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। মাত্র ৪৫ মিনিটের এই বৃষ্টিপাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/জেআইএম