কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের পেশাদার মাংস বিক্রেতা বাবু মিয়া। সারাবছর নিজ এলাকায় মাংস বিক্রি করেন। তবে কোরবানির ঈদে ছুটে যান রাজধানীতে। গত ১৫ বছর ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গরুর মাংস বানানোর কাজ করছেন। এবার ঈদেও সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে ঈদের আগের দিন সকালে উলিপুর থেকে বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন বাবু।
Advertisement
বাবুর মতো লালমনিরহাট পৌর শহরের আলোরুপা মোড়ের বাসিন্দা মাংস বিক্রেতা রাজু আহমেদও এবার কোরবানির ঈদে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শুধু বাবু ও রাজুর মতো পেশাদার মাংস বিক্রেতারাই নয়, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে অধিক লাভের আশায় রংপুর অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার পেশাদার ও মৌসুমি কসাই ছুটে যান রাজধানীতে। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের এক দিন আগে তারা ঢাকায় যান। কেউ কেউ আবার ২-৩ দিন আগে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে মাংস বানানোর কাজের বিষয়ে চুক্তি করেন।
আরও পড়ুন বিশালাকৃতির ৩ ষাঁড়, একসঙ্গে কিনলে ওমরাহ ফ্রি দুধ দিচ্ছে পাঁঠা, দেখতে মানুষের ভিড়এমন বেশ কয়েকজন কসাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় মূলত এলাকাভেদে কাজের বিভিন্ন রকমের মজুরি হয়। কোনো এলাকায় গরুর যে মূল্য, তার ওপর ১০ থেকে ১২ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১ হাজার টাকার জন্য ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে নেন কসাইরা। আবার গুলশান, বারিধারা, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় গরুর দামের প্রতি হাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে পান কসাইরা। এছাড়াও রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় গরুর আকৃতি বুঝে চুক্তিতে অর্থাৎ কোনো গরুর জন্য ১০ হাজার আবার কোনোটার জন্য ১৫ হাজার টাকায় মাংস কাটার কাজ করেন তারা।
Advertisement
ঢাকায় মূলত এলাকাভেদে কাজের বিভিন্ন রকমের মজুরি হয়। কোনো এলাকায় গরুর যে মূল্য, তার ওপর ১০ থেকে ১২ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১ হাজার টাকার জন্য ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে নেন কসাইরা। আবার গুলশান, বারিধারা, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় গরুর দামের প্রতি হাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে পান কসাইরা। এছাড়াও রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় গরুর আকৃতি বুঝে চুক্তিতে অর্থাৎ কোনো গরুর জন্য ১০ হাজার আবার কোনোটার জন্য ১৫ হাজার টাকায় মাংস কাটার কাজ করেন তারা।
এর বাইরেও অনেকে আবার মাংস ও যাতায়াত বাবদ ভাড়া বকশিশ হিসেবে দিয়ে থাকেন।
জানতে চাইলে বাবু কসাই জাগো নিউজকে জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এক বিল্ডিংয়ে গত ১৫ বছর ধরে কোরবানির ঈদে মাংস বানানোর কাজ করে আসছেন। তার সঙ্গে আরও তিন-চার জন যান। ঈদের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার দল ৬ থেকে ৭টি গরুর কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। যাতায়াত ভাড়া ও থাকা খাওয়ার খরচ বাদে এক দিনে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয় তাদের।
ঈদে মৌসুমী কসাইদের ব্যাপক আয়-ছবি জাগো নিউজ
Advertisement
রাজু আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় তাদের আত্মীয় থাকেন। প্রতিবছর তিন-চারজন পেশাদার কসাই নিয়ে লালমনিরহাট থেকে তিনি ট্রেনে অথবা বাসে সেখানে আত্মীয়র বাসায় যান। ঈদের দিন গরু প্রতি হাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। একদিনে ছয়-সাতটা গরুর কাজ করতে পারেন তারা। আর ঈদের দ্বিতীয় দিন গরু প্রতি হাজারে আসে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা জনপ্রতি আয় হয় তাদের।
আরও পড়ুন ‘বাদশা’র ওজন ৩৫ মণ, কিনতে লাগবে ১৫ লাখ টাকা সিরাজগঞ্জে গরু চুরির হিড়িক, বাদ যাচ্ছে না কোনো রাত!কোরবানির পশু জবাই করার মানুষের অভাব না হলেও এর মাংস বানানোর লোকের অভাব দেখা যায় প্রতিবছর। এ কারণে আগে থেকে কসাই ঠিক করে না রাখলে সকালে পশু জবাইয়ের পরও অনেকের মাংস বানিয়ে তা ঘরে নিতে বিকেল বা সন্ধ্যাও হয়ে যায়। রাজধানীতে কোরবানির ঈদে যত পশু জবাই হয়, সেগুলোর মাংস বানানোর মতো যথেষ্ট সংখ্যক পেশাদার কসাই ঢাকা শহরে নেই। তাই, ঈদকে কেন্দ্র করে অনেকে এক দিনের জন্য ‘মৌসুমি কসাই’ হিসেবে কাজ করেন।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ঢুষমারা চর এলাকার আব্দুর রশীদ একসময় পেশাদার কসাইয়ের কাজ করলেও এখন ভ্যানগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে প্রতিবছর কোরবানির ঈদে পুরনো পেশার টানে ছুটে যান রাজধানীতে।
আব্দুর রশীদ বলেন, ঢাকায় গিয়ে একদিনে ২০ হাজারের বেশি টাকা আয় হয়। এদিকে সেটা সম্ভব হয় না। এ কারণে প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তিনি ঢাকা চলে যান।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সম্মানীপুর এলাকার কসাই মোশাররফ হোসেনের এ পথে যাত্রা শুরু হয় বাবা আজারুল ইসলাম গোলার হাত ধরে। গত ৫ বছর ধরে বাবার সঙ্গে রাজধানীতে গিয়ে মাংস কাটার কাজ করছেন। এবার বাড়িতে কাজের ঝামেলা থাকায় যাবেন কিনা ঠিক নেই। তবে শেষ পর্যন্ত সময় ও সুযোগ আসলে বাবা না গেলেও দলের অন্যদের সঙ্গে ঢাকা যাবেন বলে জানান।
রাজধানীর মিরপুর ১১ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ। প্রতি বছরের মতো তিনি এ বছরেও গরু কোরবানি দেবেন।
এরা মূলত মৌসুমি কসাই। ঈদের সময় শুধু ঢাকাতেই কাজ করতে আসেন। একটা গরুর কাজ শেষ করতে তাদের সময় লাগে দুই ঘণ্টার মতো। কসাইদের সঙ্গে স্থানীয় অন্য পেশার লোকজন সহকারী হিসেবে কাজ করেন। আমাদের ঢাকায় যেহেতু কসাই সঙ্কট থাকে ঈদের সময়, তাই মৌসুমি কসাই আসায় আমাদের উপকার হয়। কোরবানির কাজ দ্রুত আমরা শেষ করতে পারছি। তারাও একটা মৌসুমি ব্যবসা থেকে ভালো আয় করে নিচ্ছে এই দুই দিনে।
মুঠোফোনে জাগো নিউজকে সাব্বির আহমেদ বলেন, ঈদের আগের রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের পূর্ব পরিচিত চারজন লোক তার বাসায় আসবেন। ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আমার কাজ শেষে তারা অন্যদের কাজ করবেন।
সাব্বির আহমেদ বলেন, এরা মূলত মৌসুমি কসাই। ঈদের সময় শুধু ঢাকাতেই কাজ করতে আসেন। একটা গরুর কাজ শেষ করতে তাদের সময় লাগে দুই ঘণ্টার মতো। কসাইদের সঙ্গে স্থানীয় অন্য পেশার লোকজন সহকারী হিসেবে কাজ করেন। আমাদের ঢাকায় যেহেতু কসাই সঙ্কট থাকে ঈদের সময়, তাই মৌসুমি কসাই আসায় আমাদের উপকার হয়। কোরবানির কাজ দ্রুত আমরা শেষ করতে পারছি। তারাও একটা মৌসুমি ব্যবসা থেকে ভালো আয় করে নিচ্ছে এই দুই দিনে।
আরও পড়ুন জমেনি হাট, বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা কোরবানির হাট মাতাবে ফরিদপুরের ‘রাজাবাবু’ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় যাওয়া কয়েকজন কসাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে রংপুর বিভাগ ছাড়াও বগুড়া, জয়পুরহাট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কসাইরা রাজধানীতে আসেন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মৌসুমী কসাই আজিজুর রহমান জানান, প্রতিবছর ধানমন্ডি এলাকায় কাজ করেন তিনি ও তার দল। প্রতি বছর তার এলাকা থেকে অন্তত ৫০/৬০ জন বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে রাজধানীতে আসেন।
ঈদে গ্রাম থেকে ঢাকায় আয় হয় অনেক বেশি-ছবি জাগো নিউজ
গরুর আকারের ওপর ভিত্তি করে তারা পুরো কাজের জন্য মালিকের সঙ্গে চুক্তি করেন। এতে ঈদের ১-২ দিনে তাদের বেশ ভালো অঙ্কের টাকা আয় হয়ে থাকে। পারিশ্রমিকের বাইরে খুশি হয়ে অনেকে মাংস ও আসা-যাওয়ার গাড়িভাড়াও দেন। কাজ শেষে ঈদের রাতেই তারা নিজেদের এলাকায় ফিরে যান ।
রংপুর শহরের কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ড বাজারের মাংস বিক্রেতা সাহের আলী বলেন, কোরবানির ঈদের কয়েকদিন সাধারণত কসাইদের কাজের চাপ কম থাকে। কসাইরা এলাকা ছেড়ে ঢাকা গেলেও তেমন কোনো অসুবিধা হয় না, এদিকে মাংস বানানোর কাজে প্রভাব পড়ে না।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের দামোদুরপুর বড় ময়দান এলাকার শাহিনুর ইসলাম বলেন, বছরজুড়ে তারা নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন কাজ করলেও ঈদের দুই দিন তারা ঢাকায় গিয়ে মৌসুমি কসাই হিসেবে কাজ করেন। এই সময় রাজধানী ঢাকায় প্রচুর কসাইয়ের চাহিদা থাকায় আয় ভালো হয়। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাওয়ার কারণে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক তাদের থাকেই। কোরবানির ঈদের আগে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মোস্তফা সাব্বির বলেন, বছরের এই একটা দিন ঘিরে নিম্ন আয়ের মানুষরা ভালো একটা আয়ের উৎস খুঁজে পান। ১/২ দিনে তাদের যে আয় হয় তা দিয়ে সংসারের ভালো কিছু কাজে লাগতে পারে।
এসএএইচএস/এএসএম