ভাটি অঞ্চল হিসেবে সারাদেশে পরিচিত সুনামগঞ্জ জেলা। এ অঞ্চল ছয় মাস শুকনো ও ছয় মাস জলমগ্ন থাকে। ফলে এ জেলার ১০ লাখের ওপরে মানুষ হাওরে চাষাবাদ, মৎস্য উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বছরের পর বছর ধরে গবাদিপশু লালন-পালন ও খামার তৈরি করে ভাগ্য বদল হচ্ছে না প্রান্তিক খামারিদের। এমনকি পুঁজির অভাবে জেলায় গড়ে উঠছে না পর্যাপ্ত গরুর খামার।
Advertisement
এই যেমন সুনামগঞ্জের খরচার হাওরের খামারি মতি লাল। মহাজনের কাছ থেকে টাকা এনে তিনটি গাভী ও দুটি গাভ গরুসহ পাঁচটি দিয়ে খুলেছিলেন খামার। যার নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্ন’। তবে সেই স্বপ্নের খামারটি গড়ে তুলতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। মতি লালের সেই কষ্ট এখন দূর হয়েছে। কারণ তার খামারে এখন ২০-২৫ টি গরু। যার মধ্যে ১৫টি গরু এই প্রথম কোরবানির পশুর হাটে তুলবেন।
মতি লাল জাগো নিউজকে বলেন, আমি ছোট ছোট পাঁচটি গরু দিয়ে স্বপ্ন নামে খামার খুলেছিলাম। সেই খামারে এখন আমার ২৫টির মতো গরু রয়েছে। যেখান থেকে বিভিন্ন সাইজের ১৫টি গরু পশুরহাটে তুলে প্রায় ২২ লাখ টাকায় বিক্রি করবো।
বিশেষ করে হাওরে সুযোগ-সুবিধা ভালো থাকায় এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় প্রায় ৫৫০টি গরুর খামার গড়ে উঠছে। এরমধ্যে গত দুই বছরেই জেলায় মাত্র ৫০টির ওপরে গরুর খামার করা হয়েছে। এসব খামারে দুধ উৎপাদনের জন্য গাভী লালন-পালন করার পাশাপাশি ঈদুল আজহার (কোরবানির) পশুর হাটে গরু তুলতে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন খামার মালিকরা।
Advertisement
বিশ্বম্ভরপুরের খামারি রুস্তম আলী জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে গরুর খামার দিয়েছি। যে খামারে গরু বিক্রি করে আমি লাভবান হয়েছি। তবে অনেক চেষ্টা করেছি খামার বড় করার জন্য। কিন্তু পুঁজির অভাবে করতে পারছি না।
তাহিরপুরের খামারি মিজান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, হাওরে অনেক গবাদিপশু লালন-পালন করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ ও সরকারি সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলে গরুর খামার দিয়ে বিপ্লব ঘটনা যেত।
সুনামগঞ্জ সদরের খামারি ভান্ডা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ধান, মাছ উৎপাদন শেষে এ জেলা গরুর খামারের জন্য বিখ্যাত হতো। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তেমন কোনো সহযোগিতা ও পরামর্শ পাচ্ছে না।
তাহিরপুরের খামারি রজত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমার নিজের খামারের ৫টি গরু হাটে তুলেছি। বাজারে দেশি গরুর ভালো দাম পাচ্ছি।
Advertisement
এ জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জ গবাদিপশু পালনের জন্য অনেক ভালো এক জায়গা। তবে পুঁজি সংকটের কারণে খামার বড় করতে পারছেন না অনেকে। খামারিরা যাতে সহজে ঋণ পান এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছর ঈদুল আজহায় সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার এসব খামারের প্রায় ৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার গরু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
লিপসন আহমেদ/জেডএইচ/এএসএম