ধর্ম

জিলহজ মাসের বিশেষ কোনো নামাজ আছে কি?

জিলহজ মাসের বিশেষ কোনো নামাজ আছে কি?

অনেকে মনে করেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশকে প্রতি রাতে বিশেষ নামাজ পড়া সুন্নত যে নামাজে সুরা ফাতিহার পর সুরা কাউসার তিন বার পাঠ করতে হয়। অনেকে আবার জিলহজ মাসের জুমার দিন দুই দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করার বিশেষ ফজিলত আছে বলে মনে করেন।

Advertisement

এই আমলগুলো ভিত্তিহীন। গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত কোনো হাদিস থেকে এ রকম কোনো আমল পাওয়া যায় না। কোনো সাহাবি বা তাবেঈ এ রকম আমল করতেন বলেও জানা যায় না। তাই সুন্নত, মুস্তাহাব বা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে এ রকম নামাজ আদায় করলে তা বিদআত গণ্য হবে।

ইসলামের উৎস হলো কোরআন ও রাসুলের সুন্নত অর্থাৎ তার কথা, কাজ ও সমর্থন। কোরআন ও রাসুলের সুন্নত ছাড়া অন্য কোনো সূত্রে আমলের নতুন কোনো ধরন উদ্ভাবন করে তাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করলে তা হয় দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন বা বিদআত। রাসুল (সা.) তার উম্মতকে দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয় বা বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, সব নতুন উদ্ভাবিত বিষয় থেকে বেঁচে থাকো, সব নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (সহিহ মুসলিম: ১৫৩৫)

কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে জিলহজের মহিমান্বিত দশকের ১১টি আমল

Advertisement

১. অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, যেন তারা তাদের জন্য স্থাপিত কল্যাণসমূহ প্রত্যক্ষ করে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সুরা হজ: ২৮)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ওই আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলে জিলহজের প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৫/৪১৫)

২. নেক আমল ও ভালো কাজের প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া। কেননা, মহান আল্লাহর নিকট অন্যান্য সময়ের আমলের চেয়ে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল অধিক প্রিয়। (সহিহ বোখারি: ৯৬৯, সুনানে আবু দাউদ: ২৪৩৮)

৩. অন্য সময়ের তুলনায় এই দিনগুলোতে পাপকাজ পরিহারে অধিক সচেষ্ট থাকা। (সুরা হজ: ২৮, সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

Advertisement

৪. সামর্থ্যবান হলে হজ করা। কেননা, হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ওপর হজ ফরজ। আবার কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু্ নয় মর্মে নবিজির (সা.) সুসংবাদ রয়েছে। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭, সুনানে তিরমিজি: ৮১০)

৫. সামর্থ্য থাকলে কোরবানি করা। মহান আল্লাহ বলেন, তুমি নিজের প্রতিপালকের জন্য নামাজ আদায় করো ও কোরবানি করো। (সুরা কাউসার: ২)

৬. কোরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির কোরবানি করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল, ও অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকা। (সহিহ মুসলিম: ৫০১৫)

এ হাদিসে যদিও কোরবানিদাতাকে চুল, নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, তবে বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য নেই, তারাও ফজিলতপূর্ণ এ আমলটি করতে পারেন। এমনকি শিশুদেরকেও চুল-নখ কাটা থেকে বিরত রাখা উত্তম। (সুনানে আবি দাউদ: ২৭৮৯, আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন: ৭৫২০)

৭. অধিক পরিমাণে সাধারণভাবে তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা। অর্থাৎ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ পড়া। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর নিকট জিলহজের দশদিনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় আমল নেই। অতএব, এ দিনগুলোতে তোমরা অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করো। (আল-মুজামুল কাবির: ১১১১৬)

৮. তাশরিকের দিনগুলোতে প্রত্যেক নামাজের শেষে বিশেষভাবে তাকরিরে তাশরিক পাঠ করা। অর্থাৎ ৯ জিলহজ ফজর থেকে

১৩ যিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতি নামাজের পর একবার ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৫৬৩১)

৯. প্রথম নয়দিন রোজা রাখা। কোনো কোনো বর্ণনায় জিলহজের প্রথম নয় দিনই রোজা রাখার নির্দেশনা পাওয়া যায়। এই দিনগুলোর নেক কাজ আল্লাহর প্রিয় হওয়ায় এর সবগুলো দিনই নফল রোজা রাখা যায়। অনেক ইমামগণ জিলহজের প্রথম নয় দিন রোজা রাখাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

১০. আরাফার দিন বিশেষভাবে রোজো রাখা। আরাফার দিন রোজা রাখলে আশা করা যায় মহান আল্লাহ তার পেছনের এবং সামনের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

১১. ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ পালন করা।

ওএফএফ/এমএস