কয়েক দিন পর ঈদুল আজহা। এই ঈদে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে চাহিদা বাড়ে মসলার। ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর মসলার বাজারে আবারও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি মসলাজাত কিছু পণ্যের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
Advertisement
বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি কিছুটা বাড়লেও পুরোনো দামের ধাক্কা এখনও বাজারে রয়ে গেছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, প্রতি ঈদের আগেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম।
শনিবার (৩১ মে) সকালে সরেজমিনে রাজশাহীর সাহেববাজার, মাস্টারপাড়া, হড়গ্রামসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা যায়, রাজশাহীর মসলার বাজার প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তাই ডলারের মূল্য, বৈশ্বিক বাজারে দাম ও শুল্ক কাঠামোর ওপর মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা নির্ভরশীল। দেশে কিছু মসলা উৎপাদন হলেও তা মোট চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
Advertisement
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মসলার আমদানি চলমান থাকায় পাইকারি দামে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে সেই পণ্য খুচরা পর্যায়ে গিয়ে প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়া মসলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে এলাচ, জিরা, আদা ও রসুনে।
এক মাস আগেও এলাচের কেজি ৪৬০০ টাকা ছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮০০ টাকায়। প্রতি ১০০ গ্রামে বেড়েছে ২০ টাকা। খুচরা বাজারে বেড়েছে জিরার দাম। ৫৫০ টাকার জিরা এখন ৬০০ টাকায়, আর ৬৫০ টাকার জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। অপরিবর্তিত অবস্থায় ধনিয়া পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪২ টাকা কেজি ও খুচরায় ১৯০ টাকা।
এদিকে আদা ও রসুনের দামে ও ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। মানভেদে এক মাস আগের তুলনায় বেড়ে আদা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে এবং ৭০ টাকার রসুন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। তেজপাতা, দারুচিনি, কিশমিশ, বাদামজাতীয় পণ্যের বেশিরভাগের দাম স্থিতিশীল, কিছু ক্ষেত্রে সামান্য কমেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে মশলার দাম তবে অনেক খুচরা বিক্রেতা চাহিদা বাড়বে ধরে পণ্য মজুত করেন ও সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে থাকেন।
Advertisement
সাহেববাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবু হানিফ বলেন, আমরা বড় অর্ডারে মাল কিনি, তাই দাম কিছুটা কম হয়। তবে খুচরা পর্যায়ে পরিবহন, ভাঙানো, সংরক্ষণ এসব যোগ হয়। আবার কিছু দোকানদার বিভিন্ন অজুহাতে বাড়তি দাম রাখেন।
মাস্টারপাড়া পাইকারি ব্যবসায়ী সনি হোসেন বলেন, আসলে ঈদের আগে চাহিদা বাড়ে ঠিকই, কিন্তু আমদানিও সমানতালে চলছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার তেমন কারণ নেই। সমস্যা হচ্ছে খুচরায় গিয়ে লাভের হার অনেক বেশি রাখছে কিছু বিক্রেতা। এদিকে খুচরা বিক্রেতারা আগের বেশি দামে কেনা মাল এখনো শেষ করেননি, ফলে তারা এখনও আগের উচ্চ দামে বিক্রি করছেন। তাদের দাবি, ছোট ছোট প্যাকেজিং, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য খুচরা পর্যায়ে দাম বেশি পরে।
সাহেববাজারের খুচরা বিক্রেতা সোহেল মিয়া বলেন, গত মাসে যে দামে মাল এনেছি, এখনো তা বিক্রি করছি। বিশেষ করে এলাচ ও জিরার দাম কিছুটা বেশি। আমাদের অল্প অল্প করে বিক্রি করতে হয় তাই দাম একটু বেশি।
একই বাজারের আরেক খুচরা বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের আগে গরম মসলার চাহিদা বেশি থাকে। আমদানিও ঠিক আছে, কিন্তু পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য আসতে সময় লাগছে।
অপর দিকে ক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগে প্রতি বছর একই অবস্থা হয়। মজুতদার ও কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। যার ফলে আমদানি ঠিক থাকলেও মশলার দাম বেড়ে যায়।
সাহেব বাজারে আসা গৃহিণী শাহনাজ পারভীন বলেন, ঈদ এলেই সবকিছুর দাম বাড়ে, আয় বাড়ে না। বাজারে গেলে মনে হয়, শুধু ঠকতে আসছি।
আরেক ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত এক বছরে মসলার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এখন যদি ৩০–৫০ টাকা কমেও, তাতে তেমন স্বস্তি নেই।
ক্রেতা শাহীন আলম জানান, পাইকারি বাজারে দাম ঠিক আছে শুনি, কিন্তু খুচরায় এসে কেন এত বেড়ে যায়? তাহলে তো ভোক্তারা ঠকছে। মুনাফার একটা সীমা থাকা উচিত। পাইকারি বাজারে দাম কমে গেলে খুচরায়ও তো তা প্রতিফলিত হওয়ার কথা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ে রাখছি। কোনো পণ্যের দাম কেন বাড়ছে তা জানার চেষ্টা করছি। অবৈধভাবে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাদের মশলার বাজার আমদানি নির্ভর, তাই আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে গত কয়েক মাসে মশলার বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।
সাখাওয়াত হোসেন/এমএন/এমএস