আন্তর্জাতিক

গাজায় হামলা-হত্যাযজ্ঞ যুদ্ধাপরাধ ছাড়া আর কী?

গাজায় হামলা-হত্যাযজ্ঞ যুদ্ধাপরাধ ছাড়া আর কী?

আবারও ইসরায়েলের বর্তমান শাসকদলের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গাজার ওপর চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানকে যুদ্ধাপরাধ না বলে আর পারা যাচ্ছে না।

Advertisement

ওলমার্ট ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মঙ্গলবার (২৭ মে) ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজে তার মতামত প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, গাজায় যা চলছে, তা হলো ধ্বংসযজ্ঞের যুদ্ধ। নির্বিচার, সীমাহীন, নিষ্ঠুর ও অপরাধমূলকভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।

গত ১১ সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় চালানো পূর্ণ অবরোধের কারণে কোনো ধরনের ত্রাণই পৌঁছাচ্ছে না। ফলে গাজায় চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রধানত শিশু ও বয়স্করা শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাদ্যাভাবে নিঃস্ব- ওলমার্টের বক্তব্যে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।

সিএনএনের সাক্ষাৎকারে গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও হতাহতের ধারাবাহিকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওলমার্ট বলেন, নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এটি যদি যুদ্ধাপরাধ না হয়, তাহলে আর কী? গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুযায়ী হামলায় এ মুহূর্তে ৫৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত; তার মধ্যে অন্তত ২৮ হাজার নারী ও শিশু।

Advertisement

অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, এ পর্যন্ত তারা ২০ হাজারের বেশি হামাস যোদ্ধাকে নিহত করেছে।

ওলমার্ট সতর্ক করে বলেন, আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, গাজায় যেসব নিরীহ মানুষ এই সংঘর্ষে জড়িত নন, তারা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি আরও যোগ করেন, এই অভিযান পুরোপুরি অযৌক্তিক ও বর্তমানে এটি ইসরায়েলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রক্ষায় অবদান রাখছে না।

দেশটির সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের বেশিরভাগই নাগরিক চান বিস্তৃত যুদ্ধবিরতি, যার মধ্য দিয়ে এখনও বাকি ৫৮ ফিলিস্তিনি জিম্মি মুক্তি ও গাজায় সাধারণ মানুষ সঞ্চারের ব্যবস্থা করা সম্ভব।

ওলমার্ট নেতানিয়াহু প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার দুই কট্টরপন্থি মন্ত্রী- ইতামার বেন গভি ও বেজালেল স্মোট্রিচের কঠোর নীতি আর বক্তব্যের কারণে ইসরায়েল অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Advertisement

নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে তার আস্থা এখন আর নেই। আমি আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব এই সরকার চলে যাবে, তিনি বলেন। আমি বিশ্বাস করি, অধিকাংশ ইসরায়েলি এ সরকারের নীতিমালা এবং বক্তব্যের কারণে দেশের ন্যায়পরায়ণতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই তারা ক্লান্ত ও বিরক্ত।

ওলমার্টের মতে, ইসরায়েলি সরকার যদি নিজেই যুদ্ধ বন্ধ করতে অস্বীকার করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া অন্য কারো হাত তাতে থাকবে না। তিনি বলেন, ট্রাম্পই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করতে পারেন।

এহুদ ওলমার্টের এই মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে অগ্নিসংযোগের চূড়ান্ত সমাধান আর শান্তি আলোচনা মুখ থুবড়ে আছে। সাবেক এক শীর্ষ নেতা বলছেন, বর্তমানে গাজায় ঘটে যাওয়া মানবিক বিপর্যয় আর সহ্য করার উপায় নেই। এখনই সময়, আন্তর্জাতিক তৎপরতা বাড়িয়ে সংকটের ন্যায্য সমাধান আনা।

সূত্র: সিএনএন

এসএএইচ