কৃষি ও প্রকৃতি

কলা চাষে সারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

কলা চাষে সারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

কলা চাষ বাংলাদেশের কৃষিখাতে একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও লাভজনক খাত। কলা একটি দ্রুত ফলদানকারী ফসল; রোপণের ৯-১২ মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এক হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫-৩০ টন কলা উৎপাদন সম্ভব, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।

Advertisement

কলা বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত ও প্রিয় ফল। সারাবছর এর চাহিদা থাকে। প্রায় সব ধরনের উর্বর মাটিতে কলা চাষ করা যায়। বিশেষ করে বেলে-দোঁআশ বা দোঁআশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। বাংলাদেশে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু কলা চাষের জন্য আদর্শ। অভ্যন্তরীণ চাহিদার পাশাপাশি রপ্তানিরও সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু দেশে।

কলা গাছ রোপণের প্রথম ২০ দিনের মধ্যে সারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময়েই গাছের গোড়ার গঠন, মূল বৃদ্ধির গতি ও চারা টানার ক্ষমতা নির্ধারিত হয়। সঠিক সময়ে সঠিক সার প্রয়োগ করলে গাছ পরে ভালো ফলন দেয়। নিচে বিস্তারিতভাবে কৃষকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

কলা চারা রোপণের আগে গর্তে যে সার দিতে হবে (আগাম সার)

Advertisement

প্রতি গর্তে নিম্নোক্ত সার ব্যবহার করুন। রোপণের ৭-১০ দিন আগে গর্তে মাটিতে মিশিয়ে ফেলতে হবে। পচা গোবর: ১০-১২ কেজি টিএসপি বা ডিএপি: ৭০-৮০ গ্রাম জিপসাম: ২৫-৩০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম সালফেট: ২০ গ্রাম জিংক সালফেট: ৫-১০ গ্রাম বোরন: ৫-১০ গ্রাম। উপরের সব সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

কলা চারায় সার উপরি প্রয়োগ

চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর যে সার দিতে হবে। গাছের গোড়া থেকে ৮-১০ ইঞ্চি দূরে নিম্নোক্ত সার মাটিতে মিশিয়ে দিন। ইউরিয়া: ৫০-৬০ গ্রাম এমওপি (পটাশ): ৫০-৬০ গ্রাম জৈব সার (প্রয়োজনে): আরও ২-৩ কেজি গোবর। প্রয়োজনে বায়োফার্টি বা রুট হরমোন ব্যবহার করতে পারেন—এতে গাছ দ্রুত গ্রোথ পায়।

আরও পড়ুন কেমিক্যালমুক্ত মৌসুমি ফল পাবেন যেভাবে  বায়োগ্যাস প্লান্টে বেকারদের কর্মসংস্থান 

কলা চাষে সেচ

Advertisement

কলা চাষে সঠিকভাবে পানি সেচ দেওয়া ফলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম সেচ: রোপণের পরে সাথে সাথে প্রথম সেচ দিতে হবে। এতে গাছের গোড়া ভালোভাবে বসে যায় এবং আগাম গজানোর জন্য সহায়ক হয়।

সেচের সময়সূচি

গ্রীষ্মকাল ও খরার সময়: প্রতি ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দেওয়া উচিত। শীতকালে: প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর সেচ দেওয়া যায়। বর্ষাকালে: প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতই যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত পানি জমে গেলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। ফল আসার সময় (ফুল ও ঘাড় বাঁধা অবস্থায়): এ সময়ে পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। কারণ ফল বৃদ্ধির জন্য বেশি পানির প্রয়োজন হয়।পানি নিষ্কাশন: জমিতে যাতে পানি না জমে, সেজন্য ড্রেন বা নালা রাখতে হবে। পানি জমে থাকলে গাছ পচে যেতে পারে। প্রথমদিকে পানি নিষ্কাশন ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ।

সতর্কতা: চারা রোপণের পরপরই ইউরিয়া দিলে পুড়ে যেতে পারে। তাই ১৫ দিন পর দিন। জলাবদ্ধতা থেকে সাবধান, কলা গাছ পানি সহ্য করতে পারে না।

কলা চাষে কৃষকদের সঠিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে কলা চাষ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

এসইউ/জিকেএস