বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে ফারুক আহমেদকে। তার পরিবর্তে তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হতে পারেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। যদিও ফারুক আহমেদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন নাকি তাকে সরিয়ে দেয়া হবে, সে বিষয়ে জোর গুঞ্জন চলছে।
Advertisement
ক্রিকেট বোর্ডে সম্ভাব্য এ পরিবর্তন নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে গতকাল বুধবার রাতেই তার বাসভবনে বৈঠক হয়েছে ফারুক আহমেদের। সেখানেই তাকে বিসিবি সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। যদিও বর্তমান বিসিবি সভাপতির কিছু আপত্তির মুখে বৈঠকটি অমিমাংসীতভাবেই শেষ হয়েছে।
কয়েকদিন আগে বিসিবির অর্থ পুরনো অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য কয়েকটি ব্যাংকের নতুন অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ফারুক। সেই বিতর্কের রেশ কমেছে কিছুটা। তবে হঠাৎ কী হলো যে, ফারুক আহমেদের বোর্ডে থাকা নিয়েই সংশয় শুরু হলো!
জানা গেছে, ফারুককে সরিয়ে তিন মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য বিসিবি সভাপতি পদে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বসানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। যদিও শোনা যাচ্ছে, আমিনুল ইসলাম পারিবারিক কারণেই বাংলাদেশে এসেছেন। যে কারণেই তিনি দেশে আসুন না কেন, তার এই সফরকে পুরোপুরি কাজে লাগানো হচ্ছে।
Advertisement
ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৬ এপ্রিল স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে আসার পর আগামী ২ জুন বুলবুল ফিরে যাবেন অস্ট্রেলিয়ায়। বর্তমানে বুলবুলের স্ত্রী তার পিত্রালায় যশোরে অবস্থান করছেন।
কিন্তু যেভাবে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তাতে ২ জুনের আগে নাটকীয়ভাবে বিসিবি সভাপতি হয়ে যেতে পারেন বুলবুল। গতকাল বুধবার দিবাগত গভীর রাতে ক্রিকেটাপাড়ায় উঠেছে এমন আভাস। ফারুক ও আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ফারুককে সরিয়ে বুলবুলকে বিসিবি সভাপতি বানানোর কথা বলেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তবে, ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বুলবুল।
জানা গেছে, ক্রীড়া উপদেষ্টাকে বুলবুল ও ফারুক দু’জনই কিছু শর্ত দিয়েছেন। যেহেতু আইসিসির গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করে বুলবুল মোটা অংকের টাকা পান, তাই বিসিবিতে তিনি বিনা বেতনে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। ফলে বুলবুল বিসিবির কাছে আইসিসিতে পাওয়া সমপরিমাণ মাসিক ১২ লাখ টাকা দাবি করেছেন।
ওদিকে ফারুক প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে তার কথা একটাই, ‘আমাকে তো এনএসসি কোটায় বোর্ডে এনেছেন। এখন তাহলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে সরানো হবে কেন?’
Advertisement
জানা গেছে, ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে অক্টোবর পর্যন্ত তাকে বিসিবিতে রাখার দাবি করেছেন ফারুক। তাৎক্ষণিকভাবে তার এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই বলেননি ক্রীড়া উপদেষ্টা।
ফারুক দাবি জানিয়ে আরও বলেছেন, ‘আমাকে যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে যারা স্বৈচারারের দোসর নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডেও ছিলেন, তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন কিভাবে? তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন? তাহলে সব দোষ শুধু আমার একারই? সে বিষয়ে সরকারের চিন্তা ভাবনা কী?’
ফারুকের এই মন্তব্যের পর তার সঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টার বৈঠক সেখানেই মুলতবি হয়ে যায়। যদিও এ সময় ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য দু-একদিন সময় চেয়েছেন ফারুক আহমেদ।
তারপরও পরবর্তীতে যদি ফারুককে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বা করবেন। অন্যথায় ফারুক নিজেও পদ ধরে রাখতে অনড়।
২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর ক্রিকেট বোর্ডেও পরিবর্তন আনা হয়। এনএসসির কোটায়া বোর্ড পরিচালক হওয়া জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকে সরিয়ে ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে বোর্ড পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক আহমেদ।
তবে শেষ কথা হলো- শুধু ক্রীড়া উপদেষ্টাই নন, বিসিবি সভাপতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপও আসতে পারে।
কারণ, এমনিতেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে ক্রীড়া ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে একটি বিতর্ক চলছে। সেটি নিষ্পত্তি না হতেই ফারুককে সরিয়ে আরেকজনকে বোর্ড সভাপতি পদে বসালে নতুন বিতর্ক শুরু হতে পারে। আবার আইসিসির বাধ্যবাদকতাও আছে। চাইলেই কি সভাপতিকে সরাতে পারবে সরকার? তেমনটা হলে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
জানা গেছে, সে সব বিষয়ও খুঁটিয়ে দেখছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সবকিছু পেছনে ফেলে এ অবস্থায় মাসিক ১২ লাখ টাকা বেতনে তিন মাসের জন্য বুলবুলকেই প্রথম ‘পেইড বিসিবি সভাপতি’ নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
এআরবি/এমএইচ/