আন্তর্জাতিক

গাজায় মার্কিন সমর্থিত গোষ্ঠীর ত্রাণ বিতরণে উপচে পড়া ভিড়

গাজায় মার্কিন সমর্থিত গোষ্ঠীর ত্রাণ বিতরণে উপচে পড়া ভিড়

গাজায় মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত একটি বিতর্কিত গোষ্ঠীর নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ভিড় জমিয়েছেন। ওই কেন্দ্রটি কাজ শুরু করার একদিনের মাথায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, রাফাহ শহরের গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ কম্পাউন্ডে লোকজন কাঁটাতারের বেড়া ও মাটির বাঁধ ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ছে। খবর বিবিসির।

Advertisement

জিএইচএফ জানিয়েছে, এক পর্যায়ে ত্রাণ প্রত্যাশীদের তুলনায় বিতরণ কর্মীদের সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের দলকে পিছু হটতে হয়। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, এই ভিড় সামলাতে তাদেরকে ফাঁকা গুলিও ছুঁড়তে হয়েছে।

জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে জিএইচএফ নামের এই ত্রাণ বিতরণ সংস্থাটি সশস্ত্র মার্কিন নিরাপত্তাকর্মী (ঠিকাদার) ব্যবহার করে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা করছে।

১১ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাঁজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও বর্তমানে সেই অবরোধ কিছুটা শিথিল হয়েছে।

Advertisement

গাজায় ওই ত্রাণ বিতরণের ভিডিওগুলোকে হৃদয় বিদারক বলে মন্তব্য করে জাতিসংঘ বলছে, তারা এরই মধ্যে ২১ লাখ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের একটি পরিকল্পনাও তৈরি করে রেখেছে।

জাতিসংঘসহ অন্যান্য খাদ্য সংস্থা জিএইচএফর এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, এই উদ্যোগ মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে এবং ত্রাণকে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি করে।

তারা সতর্ক করে বলেছে, এই ত্রাণ কার্যক্রম শারীরিকভাবে দুর্বলদের পিছে ঠেলে দেবে এবং মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে, বিপদের মুখে ফেলবে এবং বৈশ্বিকভাবে ত্রাণ বিতরণের জন্য একটি খারাপ নজির তৈরি করবে।

ইসরায়েল অবশ্য বলছে, হামাস যাতে ত্রাণ চুরি না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। যদিও ইসরায়েলের এই চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস।

Advertisement

এর আগে সোমবার জিএইচএফ ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা গাজায় কার্যক্রম শুরু করেছে এবং বিতরণ কেন্দ্রগুলো থেকে ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ দিচ্ছে তারা।

মঙ্গলবার বিকেলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, রাফাহর তাল আল-সুলতান এলাকায় এবং মোরাগ করিডোরে দুইটি বিতরণ কেন্দ্র থেকে খাদ্য বিতরণ শুরু হয়েছে।

প্রায় একই সময়ে, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমে তাল আল-সুলতান কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ সারির খবর শেয়ার করা হয়।

কিন্তু এর এক ঘণ্টা পরই দেখা যায়, হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুরা কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়েছে। এক ভিডিওতে লোকজনকে দৌড়াতে ও নিচু হয়ে পড়তে দেখা যায়, পেছনে গুলির শব্দ শোনা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লোকজন বিতরণ এলাকা থেকে খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ লুটপাট করে নিচ্ছিল। তাদের ভাষ্যমতে, আশপাশে অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি সেনারাও গুলি ছুড়েছে।

বিবিসিকে সেখানকার এক ব্যক্তি বলেন, অবস্থা খুবই কঠিন ছিল। প্রতি দফায় মাত্র ৫০ জনকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল। শেষে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তখন মানুষ গেট টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে, অন্যদের মারধর করে এবং সব ত্রাণ নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, এটা ছিল এক লজ্জাজনক অভিজ্ঞতা। আমরা প্রচণ্ড ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছি। এক কাপ চা খাওয়ার জন্য একটু চিনি আর একটা রুটি চাচ্ছি মাত্র।

সেখানকার একজন নারী বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মানুষকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। মানুষ এতটাই ক্লান্ত যে, শুধু সন্তানদের খাওয়াতে তারা জীবন ঝুঁকিতে ফেলতেও প্রস্তুত।

জিএইচএফ জানিয়েছে, তারা স্থানীয় এনজিওর সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত আট হাজার খাদ্যের প্যাকেট বিতরণ করেছে। যা দিয়ে প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার মানুষ খেতে পারবে।

তবে জিএইচএফ তাদের এই কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে হামাসের বিরুদ্ধে। যদিও তারা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

জিএইচএফ এক বিবৃতিতে বলেছে যে, শেষ বিকেলের দিকে এক সময় ত্রাণ প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়লে তাদের দলটি কিছুটা পিছু হটে যাতে সবাই নিরাপদে ত্রাণ নিতে পারে এবং হতাহত এড়ানো যায়। কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিক কার্যক্রম আবার শুরু হয় বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, তারা কমাউন্ডের বাইরে সতর্কতামূলক ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। এদিকে গাজায় হামাস পরিচালিত মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলের ত্রাণ বিতরণ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমরা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন কর্তৃক স্থাপিত একটি বিতরণ কেন্দ্রের আশেপাশের ভিডিওটি দেখছি। সত্যি বলতে, এই ভিডিওগুলো এবং এই ছবিগুলি হৃদয়বিদারক।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জাতিসংঘের সমালোচনাকে চরম ভণ্ডামি বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে তিনি এটিও বলেছেন, আমার মনে হয়, অধিকাংশ মানুষ একমত হবেন যে এটা ইতিবাচক খবর। মূল কথা হচ্ছে গাজায় ত্রাণ যাচ্ছে।

জিএইচএফ জানিয়েছে প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় চারটি বিতরণ কেন্দ্র খুলবে তারা। যেখানে ফিলিস্তিনিরা খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে পারবে। তারা জানিয়েছে, এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ তারা ১০ লাখ মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিতে চায়।

মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে চারপাশে পাহারা দেবে ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনিদের সেখানে প্রবেশের আগে পরিচয় যাচাই ও হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা যাচাই করা হবে।

আরও পড়ুন: লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল স্টুডেন্ট ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র পুতিন আগুনের সঙ্গে খেলছেন: ট্রাম্প

তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, তারা এমন কোনো পরিকল্পনায় অংশ নেবে না- যা মানবতা, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার মৌলিক নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করে।

টিটিএন