চমক দেখিয়েই যাচ্ছে তামিল সিনেমা ‘ট্যুরিস্ট ফ্যামিলি’। অল্প বাজেটের সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই মন কেড়ে নিয়েছে ভারতের নানা ভাষার দর্শকের। অভিশান জেভিন্থ পরিচালিত ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শশিকুমার ও সিমরান। তাদের রসায়ন নিয়ে চলছে আলোচনা। আরও অভিনয় করেছেন কমলেশ, যোগি বাবুর মতো তারকারা।
Advertisement
মাত্র ৭-৮ কোটি রুপি বাজেটের ছবিটি ১ মে মুক্তি পেয়ে আয় করে নিয়েছে ৮০ কোটি রুপিরও বেশি! ছবিটির প্রতি দর্শক-সমালোচকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। এটাকেই ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণের বাইরে সিনেমাটির জন্য বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সিনেমাটির বন্দনায় মেতেছেন রজনীকান্তসহ বড় বড় তারকারাও। সিনেমাটি দেখে রজনীকান্ত ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে পরিচালককে বলেছেন, ‘একেবারে সুপার সুপার সুপার এক্সট্রা অর্ডিনারি সিনেমা বানিয়েছো।’
এ তালিকায় নতুন করে যোগ দিয়েছেন তেলুগু তারকা ‘হিট ৩’ অভিনেতা নানি। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) সিনেমাটি দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নানি লেখেন, ‘সহজ, হৃদয়ছোঁয়া, সুন্দর বোধে ভরা সিনেমাই আমরা চাই। #ট্যুরিস্টফ্যামিলি ঠিক সেটাই দিয়েছে। পুরো কাস্ট ও টিমকে ধন্যবাদ, যারা এই রত্ন সিনেমা তৈরি করেছেন। খুবই দরকার ছিল এমন কিছু।’
Advertisement
নানির এই প্রশংসায় আবেগাপ্লুত ছবির পরিচালক অভিশান জেভিন্থ। তিনি নিজের প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘স্যার, এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল! এত উৎসাহ দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার টুইট আমাদের দিনটা রঙিন করে দিয়েছে! আমরা এখন আরও কৃতজ্ঞ ও অনুপ্রাণিত।’
নানি ছাড়াও সিনেমাটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ‘বাহুবলী’র নির্মাতা এস. এস. রাজামৌলি। তিনি বলেন, ‘দারুণ সিনেমা! হাস্যরসে ভরপুর, পরিচালক অসাধারণ কাজ করেছেন। এটা আমার অন্যতম সেরা সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা।’
শিবকার্তিকেয়ান টিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সেই ছবি পরে ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়াতে। দক্ষিণ ভারতের আরও দুই তারকা সুরিয়া ও ধানুশও সিনেমাটি দেখে সরাসরি পরিচালক অভিশানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শিল্পীদের প্রশংসা করেছেন।
কী এমন আছে এই ‘ট্যুরিস্ট ফ্যামিলি’ সিনেমাতে, কেন এত মুগ্ধতা? জানা গেছে, মনুষত্ব, সহানুভূতি ও ভালোবাসা দিয়ে অচেনা জায়গাতেও মানুষের আপন হয়ে ওঠা যায়- সেই বার্তাই দেয়া হয়েছে এই সিনেমায়। যার গল্পে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটে পড়া ইলম তামিলের একটি পরিবারের গল্প। এই পরিবারের কর্তা দাস। তার পরিবারে আছে স্ত্রী বাসন্তী ও দুই সন্তান নিথুশন ও মুল্লি।
Advertisement
কোনো কারণে তারা জাফনা থেকে পালিয়ে ভারত আসে রামেশ্বরম হয়ে। বাসন্তীর ভাই প্রকাশের সাহায্যে তারা চেন্নাইয়ের কেশবনগর কলোনিতে আশ্রয় নেয়। নিজেদের শ্রীলঙ্কান পরিচয় গোপন করে মালায়ালি সেজে বসবাস করতে শুরু করে। দাস গাড়ি চালকের কাজ নেয়। আর বাসন্তী প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।
এদিকে রামেশ্বরমে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্তে নামে নিষ্ঠুর প্রকৃতির এসিপি বলওয়ান সিং। দাসের বিরুদ্ধে সন্দেহ দেখা দিলে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ভৈরবন পরিবারটিকে রক্ষা করেন। পরিবারটি ধীরে ধীরে প্রতিবেশীদের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। দাসের ছেলে নিথুশনের সঙ্গে বাড়িওয়ালার মেয়ে কুরাল সম্পর্ক গড়ে তোলে।
একদিন এক প্রতিবেশী বৃদ্ধার মৃত্যুর পর দাসের সহানুভূতিতে পুরো পাড়া একত্রিত হয়। একসময় সবাই দাস ও তার পরিবারের আসল পরিচয় জানতে পারে। কিন্তু ভালোবাসা ও বিশ্বাসের কারণে কেউই তাদের পরিচয় ফাঁস করে না। শেষে বলওয়ান এসে দাসকে ধরতে গেলে ভৈরবন ও পাড়ার সবাই মিলে তাকে বাঁচায়। পুরো কলোনি ইলম তামিল ভাষায় কথা বলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে। ভৈরবনের মন পরিবর্তন হয়। দাসের প্রতি তারও শ্রদ্ধা জন্মায়।
উপমহাদেশের সিনেমায় যখন ডার্ক অ্যাকশন গল্পের ধুমধাড়াক্কা মারপিটের একঘেয়েমির ছড়াছড়ি তখন ব্যতিক্রমী বিনোদন নিয়ে হাজির হয়েছে ‘ট্যুরিস্ট ফ্যামিলি’। শান্ত-কোমল আবহে হাস্যরসের আড়ালে চমৎকার একটি মানবিক গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিনেমাটিতে। এর আবেগী সংলাপগুলো খুব সহজেই মনে দাগ কেটে যায়। ছবিটি শেষ হয় আবেগে আপ্লুত করা কিছু দৃশ্য দিয়ে। তাই সিনেমা শেষ হয়ে গেলেও এর রেশ থেকে যায় মনে। এই মুগ্ধতাই দর্শককে বানিয়েছে ছবিটির প্রচারক, তারকারা পর্যন্ত ছবিটি প্রচারে নেমে গেছেন নিজ নিজ তাগিদে।
কথা ছিল অনলাইনের দর্শকের জন্য মে মাসের শেষে জিয়োহটস্টারে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। তবে সূত্র অনুযায়ী, ওটিটিতে এর মুক্তি এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে। ভারতের বাইরের দর্শককে তাই ছবিটি অনলাইনে দেখতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
এলআইএ/এমএস