মো. আল-আমিন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার শৈশব কেটেছে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায়। তার বাবা পেশায় কৃষক, মা গৃহিণী। তিনি পাকুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী থেকে অর্থনীতি বিভাগে অনার্স শেষ করেন।
Advertisement
তার ক্যাডার হওয়ার গল্প, নতুনদের জন্য নির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাম হোসাইন—
জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে প্রসাশন ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?মো. আল-আমিন: বিসিএস ক্যাডার পাওয়ার মতো বড় সাফল্য হঠাৎ এসে গেলে মনে হতে পারে, সত্যিই কি আমি পেয়ে গেছি? প্রথমে বিশ্বাসই হয় না। পরে মনে হয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর মধ্যে একটি। প্রশাসন ক্যাডার পেয়ে আমি শুধু চাকরি পাইনি; রাষ্ট্রের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি, এটি গৌরবেরও বটে। আমার সাফল্যে পরিবার, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের আনন্দ আমার অনুভূতিকে আরও গভীর করে। এখন নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময়। ক্যারিয়ার, সামাজিক অবদান এবং নিজেকে বিকাশের অপার সম্ভবনাকে কাজে লাগানোর ভাবনাই এখন সব।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মো. আল-আমিন: সত্য কথা বলতে গেলে, আমি অনার্স পাসের পর প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। বিসিএস নিয়ে আমার ধারণা ছিল একেবারেই নগণ্য। জীবনের সবচেয়ে বড় জিনিসগুলো কখনো কখনো অপরিকল্পিতভাবে ঘটে। আর সেটাই হয়তো নিখুঁত ডেসটিনি। আমার গল্প অনেকটা Unscripted Success এর মতো। যেখানে লক্ষ্য ছাড়াই আপনি সেরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলেন। সিস্টেমেটিক সাকসেসের থেকেও বেশি ইন্সপেয়ারিং। কারণ এখানে ‘জীবন নিজেই আপনাকে সেরা জায়গায় রেখে দিলো’।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?মো. আল-আমিন: শুরুতেই বলেছি, প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। কারণ আমি আগে থেকে জানতাম, বিসিএসের সিলেবাস এক বিশাল সমুদ্রের মতো। সে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া আমাকে দিয়ে সম্ভব হবে না। নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল অনেক কম। পড়া শুরু করতে গিয়ে দেখি বিসিএস আর প্রাইমারির প্রিপারেশনের বিষয়গুলো প্রায় একই। এক বন্ধুর পরামর্শে তখন বিসিএস টার্গেট করে পড়া শুরু করি। বিসিএস না হলেও যাতে একটি সরকারি চাকরি হয়। আমার কৌশল ছিল একটাই। সেটা হলো, একাধারে পড়ে যাওয়া। ৪৩তম বিসিএস ছিল আমার ১ম বিসিএস।
প্রিলির আগে আমি পুরো সিলেবাস চারবার রিভিশন দিতে পেরেছিলাম। রিভিশনই আমার প্রস্তুতির মূলমন্ত্র বলতে পারেন। লিখিত পরীক্ষার প্রিপারেশন আমি চাকরি করা অবস্থায়ই নিই। রাজশাহী ডিসি অফিসের ১৬ গ্রেডের একটি পোস্টে তখন চাকরি করতাম। সারাদিন চাকরি করে সন্ধ্যায় ১ ঘণ্টা রেস্ট নিয়েই পড়তে শুরু করতাম। ছুটির দিনগুলো কাজে লাগাতে চেষ্টা করতাম। ভাইভার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে জয়েন করি। ১ম বিসিএস হওয়ায় নিজেকে নিয়ে কোনো প্রত্যাশা করিনি। দেখুন ভাগ্যের কী চমক, একসময় আমি ডিসি অফিসের অফিস সহকারী ছিলাম। সেই আমি ‘ডিসি অফিসের ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ।
আরও পড়ুন বিসিএস জয়ের গল্প শোনালেন তৌহিদ ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি ও পরামর্শজাগো নিউজ: বিসিএস প্রস্তুতিতে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল? কীভাবে তা মোকাবিলা করেছেন?মো. আল-আমিন: চ্যালেঞ্জ বলতে অনেক কিছুই ছিল। তার মধ্যে প্রধান আত্মবিশ্বাস ছিল তলানীতে। নিজেকে মূল্যায়নের সুযোগ ছিল না। তবে আমার বন্ধু বর্তমানে কৃষি ক্যাডারে কর্মরত (৪১তম বিসিএস)। সে আমাকে সর্বদা গাইড করেছে। তার প্রতি আমি অশেষ কৃতজ্ঞ। প্রথমদিকে ধৈর্য কম ছিল। তবে ধীরে ধীরে আয়ত্ত করে ফেলি। বিসিএসের মূল জ্বালানি যদি বলি, তা হলো অসীম ধৈর্য ও কঠোর অধ্যবসায়।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?মো. আল-আমিন: বাবা-মা, পরিবার, বিশেষ করে আমার মা। আমার মা-ই আমাকে চাকরির প্রস্তুতির জন্য একপ্রকার জোর করেছিলেন। পরিবারের সর্বিক্ষণিক সাপোর্ট আমাকে সাহস জুগিয়েছে সর্বদা।
Advertisement
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?মো. আল-আমিন: নতুনদের জন্য বেশি কিছু বলার নেই। বিসিএসে তারাই সফল হন; যারা গোছানো প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। অনেক ধৈর্য তো লাগবেই। পাশাপাশি নিজের দুর্বলতা আইডেন্টিফাই করে দ্রুত রিকভার করতে হবে। অনেকে অনার্স পড়তে পড়তেই প্রস্তুতি শুরু করেন। যার যার কৌশল তার তার নিজস্ব।
আপনাকে আপনার থেকে বেশি কেউ চিনবে না। প্রস্তুতি শুরু করার পর অনেক কিছু ত্যাগ করা জরুরি। ফোনে অধিক সময় ব্যয়, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে অতিরিক্ত আড্ডা কমানো জরুরি বলে মনে করি। পড়াব টেবিলে ফোকাস করতে হবে। দিনের বেশিরভাগ সময় পড়ার সাথে সম্পৃক্ত থাকলে নিজেকে এগিয়ে নেওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজেকে সর্বদা আপডেটেড রাখা। পত্রিকা, সাময়িকী এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
জাগো নিউজ: প্রশাসন ক্যাডারে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?মো. আল-আমিন: প্রশাসন ক্যাডারে আমি মোটেও উচ্চাভিলাষী নই। নিজেকে একজন বিনীত, কর্মদক্ষ ও জনবান্ধব অফিসার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। জীবন আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা স্রষ্টার একান্ত বিষয়। তবে আমি রাষ্ট্রের একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মো. আল-আমিন: নিজের সর্বস্ব দিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া। আপাতত এটাই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
এসইউ/এএসএম