পারিবার আমাদের আশ্রয়স্থল। প্রতি বছর ১৫ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। এ এমন একটি দিন যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় একটি পরিবার কীভাবে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে ওঠে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ভাবনাগুলো প্রকাশ করেছেন। তাদের এই ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে সালমা-
Advertisement
পরিবারের শিক্ষাই মানুষের প্রথম শিক্ষামুহিবুল হাসান রাফিশিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ
যাপিত জীবনে প্রত্যেক মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো পারিবারিক শিক্ষা। যার রপ্ত সর্বপ্রথম পরিবার থেকেই হতে হবে। ছোটবেলায় হাত-পা নাড়া থেকে শুরু করে কথা বলাটাও মানুষ পরিবার থেকেই শিখে। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। ফলে শিশুর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিখলে পরিবারের মানুষও তাদের সামনে কথাবার্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-স্নেহ ও পরোপকারী এবং উদার মানসিকতা এগুলো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্জন করা যায় না। একাডেমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া যাবে, মেধাবী হলে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিন্ন দেশেও তার নাম ছড়াবে কিন্তু পরিবার হতে সুশিক্ষা না থাকলে এক সময় সব ম্লান হবে এবং এটা চিরন্তন সত্য। এজন্য পরিবারকে বলা হয়ে থাকে জ্ঞানচর্চার সূতিকাগার। একটি আদর্শ মানুষের পেছনে তার পারিবারিক শিক্ষাই অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
পারিবারিক সংস্পর্শে সন্তান সামাজিকতা বজায় রাখতে শিখেইকরাম আকাশশিক্ষার্থী,চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ
Advertisement
জীবনের সবচেয়ে বেশী অনুভূতপ্রবণ বিষয় পরিবার। পরিবার ব্যতীত জীবন কল্পনা করা যায় না। পরিবারের সঠিক পরিচর্যা ও শিক্ষার সংস্পর্শে এসে সন্তান সামাজিকতা বজায় রাখতে শিখে। যা পরবর্তী জীবনে সন্তানের জন্য আশার কিরণে পরিণত হয়। সামাজিক শিক্ষা না পেলে সন্তান বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো কিংবা সামাজিক উদ্ধর্তন পর্যায়ে যারা আছেন, তাদের দূরদর্শিতা ও রণকৌশলী করতে পারিবারিক সংস্পর্শ অনস্বীকার্য।পারিবারিক কলহের জেরে সন্তানরা পরিবার, জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি বিমুখী হয়ে যায়। দায়বদ্ধতা কাজ করে না। অনেকেই ছিনতাই, খুন, মাদকাসক্ত, ধর্ষণ, রাহাজানি, জুয়ারি সহ আরো বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায়; সেখান থেকে ফেরানো অসম্ভব। পারিবারিক সুশৃঙ্খল নিয়মনীতির চর্চা ও শিক্ষা মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করে দেয়। তাই সবার উচিত সন্তানকে পারিবারিক সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা।
পরিবার: মানবিক বন্ধনের প্রথম অনুপ্রেরণাতিথি দাসশিক্ষার্থী, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল
পরিবার হলো সেই বৃক্ষ, যার ছায়ায় আমরা ক্লান্তি ভুলে যাই, আর যার শিকড় আমাদের অস্তিত্বকে ধরে রাখে। আধুনিকতার জোয়ারে ভেসে চলা এই সময়ে, পরিবার যেন সেই বাঁধ যা আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির ভিতকে দৃঢ় করে রাখে। পরিবার হলো ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহনশীলতা ও মূল্যবোধ শেখার জায়গা। একজন মানুষের মনন গঠনে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমরা সবাই কারো না কারো পরিবারের অংশ, এবং আমাদের দায়িত্ব শুধু নিজের পরিবার নয়, সমাজের সব পরিবারকে সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়া।
পরিবার থেকেই শুরু হতে পারে পরিবেশের প্রতি সচেতনতা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সবুজ পৃথিবী উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। বর্তমান সময়ে পরিবার গঠনে একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে-আর্থিক চাপ, সময়ের অভাব, মানসিক চাপ, কর্মজীবী মা-বাবার সময় সংকট প্রভৃতি। তবে প্রযুক্তি যেমন দূরত্ব তৈরি করে, তেমনি তা সেতুবন্ধনও ঘটাতে পারে ভিডিও কল, পারিবারিক চ্যাটগ্রুপ, অনলাইন পার্টি এসবের মাধ্যমেও সম্পর্ককে জীবন্ত রাখা যায়। তবে সেই অনুভূতিটা পাওয়া যায় না। তাই কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা যতটুকু সময় পাই তা যেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি কাটাতে পারি কারণ পরিবারই মানবিক বন্ধনের প্রথম অনুপ্রেরণা।
Advertisement
ইসলামের দৃষ্টিতে একটি পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব কতটুকুহোসনে আরা আমিরাশিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
ইসলাম ধর্ম হলো শান্তির ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলাম ধর্মে পারিবারিক বন্ধনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। পারিবারিক বন্ধন গড়ে ওঠে মুলত ইসলামী শরীয়া মোতাবেক। সুন্দর ও সুস্থ পারিবারিক বন্ধন সকল সমাজের কাম্য। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য যা উপাদান প্রয়োজন তার সবকিছুই ইসলামী সমাজে বিদ্যমান। যে জাতির পারিবারিক বন্ধন যত বেশি দৃঢ় সে সমাজ তত বেশি উন্নত। ইসলামী সমাজে পরিবার গঠিত হয় নারী ও পুরুষের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে। ইসলামী সমাজে স্বামী স্ত্রীর দায়িত্ব কর্তব্য, সন্তান লালনপালন তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ সম্পর্কে সুন্দরভাবে উল্লেখ্য রয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন ইসলাম শান্তির ধর্ম আর শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য পারিবারিক বন্ধন হতে হবে দৃঢ়। পরিবার থেকেই মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা, সদাচরণ ও ভালো গুণ অর্জন করে। ইসলাম ধর্মে পরিবারের গুরুত্ব অনেক কারণ সমাজের অবস্থা ভালো খারাপ সবকিছু নির্ভর করে সুস্থ পারিবারিক বন্ধনের উপর। সমাজকে সুন্দর ও প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পরিবার গঠন করতে হবে যায় ফলে সমাজ হবে সমৃদ্ধ ও শান্তিময়।
আরও পড়ুন কয়লা শ্রমিকের ঘামে জ্বলে উঠে শহরের বাতি ৯০ দশকের ছেলেমেয়ের স্মৃতিতে আজও সতেজ টমটম গাড়িকেএসকে/জিকেএস