‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ’ উপলক্ষে এবার ১৪টি শ্রেণিতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এবং শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিষয়ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার ১৮টি শ্রেণিতে (বালক ও বালিকা) প্রথম স্থান অধিকারীদের পুরস্কার দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। গত বছরের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করি, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শনিবার (১০ মে) ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫’–এর উদ্বোধন এবং প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৪ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এবার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হয়েছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোস্তফা কামাল, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা হয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাবঅর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি সুলতানা, শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হয়েছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ষাড়েরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ ইনাম উল্লাহ খান, শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা হয়েছেন জামালপুর সদরের হাছানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা ইসলাম, শ্রেষ্ঠ কাব শিক্ষক হয়েছেন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুল্যাগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহা. মতিয়ার রহমান ও শ্রেষ্ঠ কর্মচারী হয়েছেন নোয়াখালীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ মহিন উদ্দিন।
প্রতিষ্ঠানপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সুব্রত খাজাঞ্জী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শ্রেষ্ঠ পিটিআই হয়েছে রাজশাহী পিটিআই।
Advertisement
ব্যক্তি পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হয়েছেন শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ওবায়দুল্লাহ, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) শ্রেষ্ঠ সুপারিনটেনডেন্ট হয়েছেন টাঙ্গাইল পিটিআই’র সুপারিনটেনডেন্ট মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা অফিসার হয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জাকির হোসেন সরকার, শ্রেষ্ঠ পিটিআই ইন্সট্রাক্টর হয়েছেন রাজশাহী পিটিআই’র ইন্সট্রাক্টর মোঃ কামরুজ্জামান, শ্রেষ্ঠ উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর হয়েছেন নীলফামারীর ডিমলার ইনস্ট্রাকটর মোঃ মাসুদ করিম ও শ্রেষ্ঠ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হয়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার প্রধান অতিথি হিসেবে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫’ এর উদ্বোধন এবং প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান বক্তব্য দেন।
শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিষয়ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অনুযায়ী বিজয়ীদের ১৮টি ক্যাটাগরিতে (বালক ও বালিকা) মোট ১০৮টি পুরস্কার এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৪টি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অনুযায়ী ৪২টি পুরস্কারসহ মোট ১৫০টি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীরা পায় যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ২০ হাজার টাকাসহ পদক ও সনদপত্র এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সেরাস্থান অধিকারীরা পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকাসহ পদক ও সনদপত্র এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সেরা স্থান অধিকারীরা পান ৫০ হাজার টাকাসহ ক্রেস্ট ও সনদপত্র।
Advertisement
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাল্টিপারপাস কনফারেন্স হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা লালনের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। আমাদের এমন কিছু কাজ করা প্রয়োজন যাতে আজকের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেল তাদের এই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করি, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’ স্লোগান নিয়ে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্যাপন করা হচ্ছে। শুধু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ই নয়, সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত এই স্লোগানের মধ্যে তা অন্তর্নিহিত রয়েছে। তাই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষকরা শুধু চাকরি করতে আসেন না, তারা শিক্ষার্থীদের দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নেন। আমাদের সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান দিতে পারছি না। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব রয়েছে এই মহান পেশায় যে শিক্ষকরা রয়েছেন তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার। আজকের প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি আমরা শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখবো।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরো বলেন, গভর্নিং বডি ছাড়া অভিভাবকরাও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে নজর রাখেন তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সমস্যা থাকবে না। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃতি, খেলাধুলা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবে, পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটবে। এ সব আয়োজনে অভিভাবক ও সমাজের সব স্তরের লোকজনের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এমএমএআর/এএসএম