জাতীয়

স্কুলের সামনে ময়লার ভাগাড়, ফুটপাত দখল

স্কুলের সামনে ময়লার ভাগাড়, ফুটপাত দখল
     

রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লার দুর্গন্ধে পড়াশোনা করতে এবং বিদ্যালয়ের মাঠে খেলতে অসুবিধা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

Advertisement

এছাড়া ময়লা-আবর্জনার পাশেই বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট। এতে সরু সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও সমাধান মেলেনি বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। অথচ বিদ্যালয়ের পাশের সড়কেই অবস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ এর কার্যালয়।

আরও পড়ুন বুড়িগঙ্গা যেন ঢাকার ‘ডাস্টবিন’ ঢাকনাবিহীন গাড়িতে বর্জ্য অপসারণ, উপেক্ষিত আদালতের নির্দেশ সুরমার ঘাটে ঘাটে, স্কুলগুলোর সামনে ময়লাবাহী গাড়ি-ডাস্টবিন!

সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে ১৩, ১৪ নম্বর সেকশন ও কচুক্ষেতের দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই হাতের বাঁ দিকে একটি সড়ক চলে গেছে। সড়কের গাঁ ঘেষেই রয়েছে সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে দুই শিফটে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।

সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রথম ধাপে চলে সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়-৭১-এর পাঠদান কার্যক্রম।

Advertisement

‘বিস্তারিত ঠিকানা আমার হোয়াটসঅ্যাপে দিন। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে স্কুলের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড় অপসারণ করবো।’- ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান

বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে দুটি সড়ক চলে গেছে। একটি কচুক্ষেতের দিকে, আরেকটি মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের দিকে। এর মধ্যে দক্ষিণ পাশে বিদ্যালয়ের দেওয়াল ঘেঁষে থাকা ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। পশ্চিম পাশে দেওয়াল ঘেঁষে থাকা ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। ফুটপাত ও সড়ক দখল করে রাখা হয়েছে ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি। তার মধ্যেই রাস্তার ওপর রাখা হয়েছে ময়লাবোঝাই লোহার কনটেইনার। অনেকে সেখানে ময়লা ফেললেও বেশিরভাগ ময়লাই পড়ে আছে রাস্তার ওপর। সড়কের বিশাল অংশজুড়ে থাকা এই ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে টেকা দায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পথচারীদের দুর্গন্ধ নিয়েই চলতে হয় প্রতিনিয়ত।

\

আরও পড়ুন ভাগাড়সহ কোনো স্থানেই ময়লা পোড়ানো যাবে না: পরিবেশ উপদেষ্টা দিনের বেলায়ও বর্জ্য অপসারণ, ভোগান্তিতে নগরবাসী আবাসিক এলাকায় ময়লার ভাগাড়, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এলাকাবাসী জাপানে যে কারণে রাস্তাঘাটে ময়লা ফেলার ডাস্টবিন নেই

এ ব্যাপারে কথা হয় বিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা জানায়, সব সময় ময়লার দুর্গন্ধের মধ্যেই থাকতে হয় তাদের। ক্লাস শেষে স্কুলের মাঠে ঠিক মতো খেলাধুলা করতে পারে না তারা। সব সময় দুর্গন্ধ আসে। আবার অনেক সময় তাদের বল গিয়ে ময়লার মধ্যে পড়ে। তখন বল কুড়িয়ে আনতে খুব কষ্ট হয়।

Advertisement

‘আমরা বিভিন্ন সময়ে তিনবার শুধু সিটি করপোরেশন, এমনকি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও থানা এই তিন জায়গায়ই লিখিত অভিযোগ করেছি। কোনো কাজ হয়নি।’- সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিনাত মহল বেলী

সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিনাত মহল বেলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে এই ময়লা থেকে সব সময় প্রচুর দুর্গন্ধ আসে। অনেক সময় দুর্গন্ধের কারণে বাচ্চাদের স্কুলে থাকতেও সমস্যা হয়। স্কুলের দেওয়াল ছোট আর দেওয়ালের সঙ্গে ময়লার ভাগাড় হওয়ায় অনেক সময় আশপাশের দোকানিরা ময়লা ভাগাড়ে ছুড়ে ফেললে তা স্কুলের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে। অনেক ধরনের সমস্যা হয়।’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার এখানে পোস্টিং হয়েছে ২০১৪ সালে। সে সময় থেকে ময়লার ভাগাড় দেখছি। তারপর বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে এটিকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় যখন দেড় বছর স্কুল বন্ধ ছিল তখন আবার তারা এটাকে (ডাস্টবিন) এখানে নিয়ে চলে আসে। এরপর আমরা বিভিন্ন সময়ে তিনবার শুধু সিটি করপোরেশন, এমনকি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও থানা এই তিন জায়গায়ই লিখিত অভিযোগ করেছি। কোনো কাজ হয়নি। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক লোকজনসহ অনেকেই এলো দেখা করতে। তাদেরও বারবার বললাম এই কাজটা করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পরে দেখলাম তাদের এ প্রসঙ্গে কথা বলার পর তারা আর আগান না।’

আরও পড়ুন কীর্তনখোলা যেন একটি ডাস্টবিন ঢাকা কলেজে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, দায় নিচ্ছে না কেউই অসময়ে সড়কে ঝাড়ু, ধুলাদূষণে অতিষ্ঠ ঢাকা দক্ষিণের নাগরিকরা

‘চার-পাঁচ বছর এত চেষ্টা, এত কিছু করলাম, কোনোভাবেই কিছু করা গেলো না।’ বলে হতাশা প্রকাশ করেন জিনাত মহল বেলী।

শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়-৭১ এর প্রধান শিক্ষক ফারহানা হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যখন স্কুলে যাতায়াত করি, স্কুলের গেটে এসে যখন রিকশা থেকে নামি, তখন এমন দুর্গন্ধ! আর দেখি ময়লার ওখানে দাঁড়িয়ে মানুষ প্রস্রাব করে, তখন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। তাছাড়া উৎকট দুর্গন্ধ তো আছেই। এই ময়লার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিস্তারিত ঠিকানা আমার হোয়াটসঅ্যাপে দিন। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে স্কুলের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড় অপসারণ করবো।’

কেআর/এমএমএআর/এমএফএ/জিকেএস