পাবনায় সঞ্চয় ও ডিপিএসের নামে কমপক্ষে ২৫০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে আব্দুল কাইয়ুম নামের এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। কাইয়ুম পাবনার মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামের একটি এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ঘটনার পর তিন মাস ধরে পলাতক রয়েছেন তিনি ও তার স্ত্রী। অফিসও তালাবদ্ধ।
Advertisement
অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা। বুধবার (৭ মে) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে আব্দুল হামিদ সড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ২০১১ সালে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করেন আব্দুল কাইয়ুম। তিনি এনজিওটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার স্ত্রী রঞ্জনা খাতুন চেয়ারম্যান। বেশকিছু নারী মাঠকর্মী নিয়োগ করে গ্রামের অসহায় নারীদের টাকা দ্বিগুণ হওয়ার প্রলোভন দিয়ে সঞ্চয় ও ডিপিএসের নামে টাকা জমা নিতে শুরু করেন তারা।
তিন মাস আগে বিভিন্ন গ্রাহকের ডিপিএসের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তির পর লভ্যাংশসহ টাকা চাইতে গেলে দিতে টালবাহানা শুরু করেন কাইয়ুম। একপর্যায়ে গ্রাহকদের সব টাকা নিয়ে উধাও হন তিনি।
Advertisement
পাবনা পৌর সদরের লাইব্রেরি বাজারের আব্দুল মালেকের স্ত্রী ভুক্তভোগী আফসানা খাতুন বলেন, ‘আমার জমা দেওয়া ২৩ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক কাইয়ুম পালিয়েছে। তার ফোন বন্ধ। অফিসেও তালা। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমার টাকা কীভাবে ফিরে পাবো, সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে গেছি।’
এনজিওটির মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সদর উপজেলার বলরামপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফার স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তিনি বলেন, আমি মাঠকর্মী হিসেবে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে নারীদের বুঝিয়ে এই এনজিওতে টাকা সঞ্চয় করিয়েছি, ডিপিএস করিয়েছি। আমার মাধ্যমে প্রায় ৮০ লাখ টাকা এনজিওতে জমা হয়েছে। এখন মালিক প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা আমার বাড়িতে চড়াও হচ্ছে। টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি এখন এতগুলো টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আরেক মাঠকর্মী লাইব্রেরি বাজার এলাকার জামিরুল ইসলামের স্ত্রী নীপা আক্তার বলেন, ‘আমি প্রায় ৪০ লাখ টাকা তুলে জমা দিয়েছি। এখন টাকা ফেরতের সময় আর মালিককে পাচ্ছি না। আমরা চাকরি করেছি কিন্তু আমাদের ফাঁসিয়ে মালিকপক্ষ পালিয়েছেন। আমরাও এর বিচার চাই।’
লস্করপুর এলাকার মৃত মনিরুল হকের স্ত্রী রেহেনা খাতুন। তার দুই মেয়ের বিয়ের জন্য রাখা তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা মেঘনা এনজিওতে ডিপিএস করেছিলেন। সেই টাকাও পাচ্ছেন না তিনি। অন্তত আসল টাকা ফেরত চান তিনি।
Advertisement
একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলরামপুর গ্রামের হাশেম আলীর স্ত্রী ময়না খাতুনের পরিবারের চার সদস্য। তারা এই এনজিওতে ১৫ লাখ টাকার ডিপিএস করেছেন।
এ বিষয়ে বুধবার বিকেলে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম ও তার স্ত্রী রঞ্জনা খাতুনের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসআর/এএসএম