আফসার হোসাইন
Advertisement
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও সাদেক হোসেন খোকাসহ ৩ হাজার ৫৭ জনের কবর খুঁড়েছেন মনু মিয়া। লাল টগবগে যে ঘোড়াটিতে চড়ে কবর খুঁড়তে যেতেন, তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত তার প্রিয় ঘোড়াটিকে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এই খবর ভাইরাল হলে মনু মিয়াকে ঘোড়া ও তার সঙ্গে একটি ঘোড়ার গাড়ি উপহার দিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় হাসপাতালে ছুটে যান মানবিক সংস্থা আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন।
নাসির উদ্দিন বলেন, গোরখোদক মনু মিয়াকে দেখতে এবং গাড়িসহ একটি ঘোড়া উপহার দিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছি। মনু মিয়ার জন্য রংপুরে নতুন টগবগে আরেকটা লাল ঘোড়া দরদাম করে ফাইনাল করে রেখেছি। চেয়েছিলাম আজকেই মেডিকেলে এনে সারপ্রাইজ দেবো। শারীরিক অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একইসঙ্গে মনু মিয়ার ভাইপো জানালেন, ঘোড়া না এনে উনাতে দেখতে এলে বেশি খুশি হবেন।
Advertisement
শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাশীল মানুষ মনু মিয়া সস্নেহে ঘোড়া বা ঘোড়ার গাড়ি, উভয়টাই উপহার নিতে অস্বীকৃতি জানালেন। মূলত তিনি কারোর কাছ থেকে কিছু নিতে ইচ্ছুক নন। তখন তাকে জানালাম, হাদিয়া নেওয়া সুন্নত। তিনি সঙ্গে সঙ্গে জানালেন, হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া উভয়টাই সুন্নত। তিনি আমাদের তার কিশোরগঞ্জের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালেন।
আরও পড়ুন
কবর খুঁড়তে ছুটে যাওয়া মনু মিয়ার ঘোড়াটিকে মারলো কারা সেই মনু মিয়ার সঙ্গে বুক মিলিয়ে যা বললেন খায়রুল বাসার৭৫ বয়সী মনু মিয়ার কোনো ইচ্ছে আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ওমরাহ হজ করার খুব ইচ্ছে। তাকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার সঙ্গে জানালাম, আমাদের পক্ষ থেকে আপনার জন্য ওমরাহ হজের ব্যবস্থা করে দিতে চাই। আপনি সুস্থ হলেই দয়া করে জানাবেন। আমরা সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেবো, ইনশাআল্লাহ।
নাসির উদ্দিন আরও বলেন, তিনি সুস্থ হলে তা ভেবে দেখবেন এমনটা জানিয়েছেন। মহান আল্লাহ এ শ্রদ্ধেয় মানুষটার অপূর্ণ ইচ্ছেটা পূরণ করে দিন। তার মতো মানবিক মানুষ এ দেশে বড্ড প্রয়োজন।
Advertisement
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়া। তার বয়স এখন ৭৫ বছর। তিনি কবরের কারিগর। কোথাও মৃত্যু সংবাদ শুনলে খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোড়ায় করে ছুটে যান কবরস্থানে।
মানুষের অন্তিম যাত্রায় তিনি বাড়িয়ে দেন তার আন্তরিকতার হাত। এভাবেই কবর খুঁড়ে যাচ্ছেন ৫০ বছর ধরে। এজন্য নেন না কোনো পারিশ্রমিক। এভাবে নিঃস্বার্থ সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। মনু মিয়ার ডায়েরির তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত তিনি কবর খুঁড়েছেন ৩ হাজার ৫৭টি।
এমআরএম/এমএস