ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানরা স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। ‘স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের অপসারিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ’র ব্যানারে এই দাবি জানান জনপ্রতিনিধিরা।
Advertisement
বুধবার (৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ষষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও গাজীপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইজাদুর চৌধুরী মিলন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্বতন্ত্রভাবে এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষভাবে বিভিন্ন ধাপে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে দলীয় কোনো মনোগ্রাম, মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক ছিল না। নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করে বিজয় অর্জন করে শপথ নিয়ে অনেকেই উপজেলা পরিষদে কাজ শুরু করেন।
ইজাদুর চৌধুরী মিলন বলেন, তবে গত বছরের ১৮ ও ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-১ শাখার পত্রে উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর ধারা ১৩ (ঘ) প্রয়োগ করে সারা দেশের ৪৯৫ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়। এর পর থেকে উপজেলা পরিষদে জনপ্রতিনিধি না থাকায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নাগরিক সেবা প্রতিনিয়ত বিঘ্ন হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত সব জনপ্রতিনিধিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
Advertisement
স্থানীয় সরকার উপজেলা পরিষদ আইন ব্যতিরেকে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এসব জনপ্রতিনিধিকে অব্যহতি প্রদান স্থানীয় সরকারের মূল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বহাল তবিয়তে আছেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপি নেতা শপথ গ্রহণ করে মেয়র হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা হতবাক হয়েছি। এই বিষয়গুলো বৈষম্য নয় কি?
ইজাদুর চৌধুরী মিলন আরও বলেন, আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এটাই কি আমাদের অপরাধ? না, এটা আমাদের অর্জন। আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তার দোসর নেতা এবং কথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নামধারী আওয়ামী ক্যাডারদের দেখানো ভয়ভীতি তথা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বতন্ত্রভাবে ভোটের মাঠে ভোটযুদ্ধে লড়াই করে জনগণের ভোটে জয়লাভ করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও উপজেলা নির্বাচন হলে আমরা নির্বাচিত হবো। এসময় তিনি উপজেলা জনপ্রতিনিধিদের স্বপদে বহালের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারের রামু উপজেলার অপসারিত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সিকদার বলেন, আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। মানুষের সেবা করার জন্য আমরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারে বসেছিলাম। কিন্তু এক মিনিটের মধ্যেই আমাদের অপসারণ করা হয়। জনগণ আমাকে প্রতিদিন ফোন দেন। কিন্তু তারা তো জানেন না যে, আমাদের অপসারণ করা হয়েছে। জনগণের স্বার্থেই আমাদের স্বীয় পদে বহাল করুন।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের অপসারিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বানু বলেন, মানুষের ভোটে আমরা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আমাদের অপসারণ করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ নানান ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছে। জনগণ এখনো আমাদের সেবা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ষষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ফোরামের সদস্য সচিব মো. হানিফ আহমেদ প্রমুখ।
এনএস/কেএসআর/জেআইএম