বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ঠিক পরের সময়কার কথা। তখনকার টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা মোহাম্মদ রফিককে বাদ দিয়ে আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার এনামুল হক মনিকেই দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে এক নম্বর বাঁ-হাতি স্পিনার মনে করতেন। তখনতো আর টি-টোয়েন্টি ছিল না।
Advertisement
বলা হতো রফিক হচ্ছে ওয়ানডে বোলার। আর এনামুল হক মনির ফ্লাইটে বৈচিত্র্য আছে। বল স্পিন করে। তাকেই টেস্টে মানায়। তাই শুরুর দিকে রফিকের চেয়ে মনিই টেস্ট খেলেছেন বেশি। কিন্তু ইতিহাস জানাচ্ছে, সে চিন্তা ছিল অমূলক। ভুল। রফিক টেস্টেও ছিলেন দারুন সফল। বাংলাদেশের প্রথম ১০০ উইকেট শিকারি ছিলেন রফিক।
দুইযুগ পর আবারো স্পিনার খেলানো নিয়ে চোখে পড়ছে নানা বিপত্তি। এখন আর টেস্টে মানে লাল বলে নয়, সাদা বলে অফস্পিনার হিসেবে খেলানোয় টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা হাঁটছেন ভুল পথে। দেখে মনে হচ্ছে শেখ মেহেদী ছাড়া সাদা বলে আর কোন অফস্পিনার নেই দেশে। আর বাঁ-হাতি স্পিনার মানেই তানভির ইসলাম। বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিনার হিসেবে তানভিরই শেষ কথা।
এতে করে আড়ালে পড়ে গেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর রাকিবুলরা। জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্টের সাথে দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় জড়িত থাকার পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেট বিশেষ করে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে সব ক্রিকেটারকে খুব কাছ থেকে দেখা খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন সাদা বলে মানে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে ফরম্যাটে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর রাকিবুলকে বিবেচনায় আনা উচিত।
Advertisement
এবারের লিগে চমক দেখানো গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করা খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে লেফট আর্ম স্পিন ভোগাচ্ছে। সাকিবের পর সেই মানের বাঁ-হাতি স্পিনার নেই। সুজনের মূল্যায়ন, তানভির ভাল বোলার। বাট তাকে আরও ভাল করতে হবে। তাহলে সাকিবের মানে না হোক, এ মুহূর্তে সাদা বলে দেশের একনম্বর বাঁ-হাতি স্পিনার কে?’ সুজনের মত, ‘রাকিবুলই এখন সাদা বলে দেশ সেরা লেফট আর্ম স্পিনার। তাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। রাকিবুলকে খুব ভাল রেট করি। সে এখন অনেক পরিণত হয়েছে।’ রাকিবুলকে খেলানোর পক্ষে সুজনের কথা, ‘তাকে একটা টিকিট দেয়া উচিৎ।’
এাড়া মিডল অর্ডার ব্যাটার ও অফস্পিনার হিসেবে সুজনের বিশেষ পছন্দ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার চোখে এ মুহূর্তে সাদা বলে মোসাদ্দেকই বেস্ট অলরাউন্ডার। যিনি ব্যাটিংটা খুব ভাল করেন। অফস্পিনার হিসেবেও দক্ষ। সুজনের পরামর্শ, ‘মোসাদ্দেককে জায়গামত ব্যবহার করতে পারলে তার কাছ থেকে বেশি কার্যকর পারফরমেন্স পাওয়া যাবে।’ ‘সাদা বলে মোসাদ্দেক এক্সিলেন্ট ক্রিকেটার। খুব ভাল ও অতিকার্যকর অলরাউন্ডার। তাকে যদি আমরা বিশ্বাসটা দিতে পারি এবং তার জায়গায় খেলাতে পারি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত খুবই হ্যান্ডি অফস্পিনার ব্যাটার হতে পারে। বাংলাদেশ যে জায়গায় একজন ট্রু অলরাউন্ডারকে মিস করছে, আমরা শেখ মেহদীকে দিয়ে কাজ সারার চেষ্টা করছি। তাকে ৫ নম্বরে খেলাচ্ছি। নতুন বলে বোলিং করাচ্ছি। বাট শেখ মেহেদী ইজ নট নাম্বার ফাইভ ব্যাটার। মেহেদী খুব ভাল স্পিনার। হয়ত সাদা বলে দেশের অন্যতম সেরা অফস্পিনার।’
‘বাট আমরা যদি ব্যাটার অলরাউন্ডার খুঁজি বা খেলাতে চাই, তাহলে মোসাদ্দেক অনেক বেটার অপশন। তার অফস্পিনটাও বেশ ভাল। আর এখন পাঁচ ছয়ে ব্যাটিংটাও করে অনেক আস্থা, আত্মবিশ্বাস নিয়ে। আমি মোসাদ্দেককে নিয়ে বিশেষ ভাবার কথা বলবো। আর লেফট আর্ম অর্থোডক্স স্পিনারের কথা বললে আমি নির্দিধায় রাকিবুলের কথাই বলবো।’ দেশের ক্রিকেটের লড়াকু যোদ্ধা খালেদ মাহমুদ সুজনের পক্ষে কথা বলছে পরিসংখ্যান। সাক্ষী দিচ্ছে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যৌথভাবে ৩০ উইকেট দখল করে সর্বাধিক উইকেট শিকারী মোসাদ্দেক ও রাকিবুল। পাশাপামি ৪৮৭ রান করে সেরা অলরাউন্ডারও হয়েছেন মোসাদ্দেক। তার আত্মবিশ্বাস, জায়গামত ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠার ক্ষমতা হতে পারে টিম বাংলাদেশের বাড়তি শক্তি।’
এআরবি/আইএইচএস
Advertisement