দেশজুড়ে

বৃষ্টিতে জেগেছে চা বাগান, এসেছে নতুন কুঁড়ি

বৃষ্টিতে জেগেছে চা বাগান, এসেছে নতুন কুঁড়ি

কয়েক দিনের টানা গরমে পুড়ছিল মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলো। বিবর্ণ হয়ে যায় অধিকাংশ চা গাছ। অনেক স্থানে শুরু হয়েছিল লাল রোগের প্রাদুর্ভাব। এতে কমে যায় চা উৎপাদনের গতি।

Advertisement

কিন্তু গত তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে ফের জেগে উঠেছে চা বাগান। নতুন কুঁড়ি ও সবুজ পাতা গজিয়েছে। চা উৎপাদন মৌসুমে প্রথম বৃষ্টি পেয়ে নতুন পাতা বের হতে শুরু করেছে। ফলে বাগানগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। বৃষ্টির ফলে এখন বাগান রক্ষায় কৃত্রিমভাবে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি। ২০২৩ সালে ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। আর ২০২৪ সালে হয় ৯৩ মিলিয়ন কেজি, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম ছিল।

এরমধ্যে এবার মৌসুমের শুরুতেই খরায় চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। এরই মধ্যে মার্চের শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে নতুন বছরে চা পাতা আসতে শুরু করে।

Advertisement

প্রায় চার মাস আগ থেকেই বাগানের সেকশনগুলোয় চা গাছ ছাঁটাইয়ের কাজ শুরু করেছিল বাগান কর্তৃপক্ষ। ছাঁটাইয়ের কারণে চা বাগানে চলে এসেছিল রুক্ষ শুষ্কভাব। এ অবস্থায় সহনীয় তাপমাত্রার সীমা পেরিয়ে গেলে বিপত্তিতে পড়েন বাগান সংশ্লিষ্টরা। বৃষ্টির অভাবে রুক্ষ বাগানে নতুন পাতার দেখা মেলেনি খুব একটা। এরমধ্যে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সামান্য যা কুঁড়ি-পাতা ছিল তাও আক্রান্ত হতে শুরু করে। অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টিতে বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা অনেকটাই খুশি।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির ডিজিএম শফিকুর রহমান (মুন্না) বলেন, বৃষ্টিতে বাগানগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ভালো ফলনের সম্ভাবনার পাশাপাশি আপাতত বাগানগুলোতে কৃত্রিম পানি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তবে অনাবৃষ্টির কারণে ও তীব্র খরায় মৌসুমের শুরুতেই অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ফিনলে টির ভাড়াউড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার জিএম শিবলী বলেন, প্রচণ্ড খরায় পুড়েছিল চা বাগান। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। তবে এখন কিছুদিন ধরে ভালো বৃষ্টি হচ্ছে। সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে উৎপাদন বছরের শুরু থেকে করা যেত।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, চা শিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এবছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০৩ মিলিয়ন কেজি। খরা মৌসুমের শুরুতে এসেছিল। এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও বাকি মৌসুম কাজ করলে কাটিয়ে উঠা যাবে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, খরায় গাছ মরে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য আমরা বাগান কর্তৃপক্ষকে ছায়াতরু রোপণ, ইয়াং চা গাছে প্রুনিং ও গাছের গোঁড়ায় কচুরিপানা দিয়ে খরা মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছি। এই পদ্ধতি প্রয়োগ না করলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। প্রতিবছর আগাম প্রস্তুতি নিলে এটি কাটিয়ে উঠা যাবে।

ওমর ফারুক নাঈম/জেডএইচ/জেআইএম