দুর্নীতির যেন ‘স্বর্গরাজ্যে’ পরিণত হয়েছে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (আগের নাম কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)। সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে লুটপাট অব্যাহত রেখেছে একটি চক্র। সম্প্রতি হাসপাতালের জিনিসপত্র কেনার নামে পুকুরচুরির একটি চিত্র জাগো নিউজের হাতে এসেছে।
Advertisement
নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চীনে উৎপাদিত ব্লাড লাইন সেট ক্রয় করা হয়েছে ১২০০টি; সেখানে প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে তিন হাজার ৪৪৭ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ এর বাজারমূল্য মাত্র ২৬০ টাকা। চীনে উৎপাদিত হেমো ডায়ালাইজার সেট কেনা হয়েছে তিন হাজার ৭৪৩ টাকা দিয়ে ৩৩৯টি। অথচ এর বাজারমূল্য ৮৭০ টাকা। ভারতে উৎপাদিত স্কিন স্ট্যাপলার কেনা হয়েছে এক হাজারটি, যার মূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার ১৮২ টাকা। বাজারে এর প্রকৃত মূল্য মাত্র ৮০০ টাকা।
ভারতে উৎপাদিত পোলেন সফট মেস কেনা হয়েছে ৫০০টি, যার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫২৫ টাকা। অথচ বাজারে সবচেয়ে ভালোটার দাম মাত্র দুই হাজার ১০০ টাকা। পাকিস্তানে উৎপাদিত এভি ফিস্টুলা নিডেল (সুই) কেনা হয়েছে ১২০০টি। এর প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৪৩ টাকা করে। অথচ বাজারে সবচেয়ে ভালোমানের এই সুইয়ের দাম মাত্র ৭০ টাকা। ওই অর্থবছরে ঠিক এভাবেই কারসাজি করে ৪৫৫টি সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি কয় করে প্রতিষ্ঠানটি।
স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে অডিট আপত্তির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এমআরপি মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে এমএসজার সামগ্রী ক্রয় করায় ৪৬ লাখ ৮ হাজার ৪৮৮ টাকা, বাজারদর অপেক্ষা অধিক মূল্যে এমএসজার লিলেন সামগ্রী কেনায় ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৭ টাকা এবং প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও গজ, ব্যান্ডেজ, তুলাসামগ্রী কেনায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪১ লাখ ৮ হাজার ৬৪৬ টাকা।
Advertisement
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি হুকুমের গোলাম। আমাকে যা বলতো আমি তাই করতাম। তাছাড়া অডিট ও অফিসের কিছু বিষয় থাকে সেগুলোও তো দেখতে হয়।’
জাগো নিউজের হাতে আসা নথিতে হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ডা. সৌমেন চৌধুরীর সই রয়েছে। ফোন করে টেন্ডারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. মো. আরশ্বাদ উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, আমি পিআরএলে আসার ১০ দিন আগে জাকির সাহেব আমাকে দিয়ে একটি চাহিদাপত্রে সই নেন। সেখানে কোনো জিনিসের দাম লেখা ছিল না। যদি দাম লেখা থাকতো তাহলে আমি কোনোদিন সই করতাম না। আমি তো এগুলোর দাম জানি।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিকুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমি আসার আগে যে টেন্ডার হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
Advertisement
এসআর/জেআইএম