ধর্ম

হজ-ওমরাহ পালনকারী যেভাবে তালবিয়া পড়বেন

হজ-ওমরাহ পালনকারী যেভাবে তালবিয়া পড়বেন

হজ ও ওমরাহর অন্যতম অনুষঙ্গ তালবিয়া। তালবিয়ার মাধ্যমে হজ ও ওমরাহ আদায়কারী সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার দরবারে আনুগত্য প্রকাশ করে, তার ভক্তি ও ভালোবাসায় নিজেকে সমর্পণ করে। শিরক বর্জনের ঘোষণা দিয়ে এক আল্লাহর ওপর ইমান প্রকাশ করে। আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করে।

Advertisement

তালবিয়া হলো,

لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ - لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ - اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ - لاَ شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।

অর্থ: আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি হাজির হে আল্লাহ! আপনার কোনো অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামতরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোনো অংশীদার নেই।

Advertisement

তালবিয়া পুরোটা পাঠ করতে হয়। কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়া মাকরুহ।

হজ ও ওমরায় কখন তালবিয়া পড়তে হয়?

ওমরাহ পালনকারী ওমরাহর ইহরামের পোশাক পরিধানের পর ওমরাহর নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবেন। ইহরাম বাঁধার পর থেকে থেকে তাওয়াফের আগে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার আগ পর্যন্ত বারবার তালবিয়া পাঠ করবেন। তাওয়াফের আগে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার পর আর তালবিয়া পাঠ করবেন না। তাওয়াফের সময় তালবিয়া পাঠ করবেন না। সাঈ করার সময়ও তালবিয়া পাঠ করবেন না। তাওয়াফ ও সাঈর সময় নবিজির (সা.) সুন্নত অনুসরণ করে অন্যান্য দোয়া পড়বেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমরাহর সময় হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিতেন। (সুনানে তিরমিজি)

হজ পালনকারী হজের ইহরাম বাঁধার পর তালবিয়া পাঠ করবেন। হজের ইহরাম বাঁধার পর থেকে ১০ জিলহজ কোরবানির দিন জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত বারবার তালবিয়া পাঠ করবেন। ফজল ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতেন। (সহিহ বুখারি)

Advertisement

নারীরাও তালবিয়া পাঠ করবেন

পুরুষ ও নারীদের তালবিয়া

পুরুষরা ইহরাম বাঁধার পরে উচ্চৈস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে আদেশ দিলেন—আমি যেন আমার সঙ্গীদের উঁচু স্বরে তালবিয়া পাঠ করতে নির্দেশ দেই। (সুনানে আবু দাউদ)

হজ ও ওমরারহ সময় পুরুষদের মতো নারীরাও ওপরে উল্লিখিত নিয়মে তালবিয়া পাঠ করবেন। তবে নারীরা পুরুষদের মতো উচ্চৈস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন না। তালবিয়া ও অন্যান্য দোয়া নারীরা পাঠ করবেন নিজে শুনতে পারেন—এতটুকু আওয়াজে।

তালবিয়া পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

খাল্লাদ ইবনুস সায়েব তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি যেন আমার সাহাবিদেরকে উচ্চৈস্বরে তালবিয়া পাঠ করার নির্দেশ দেই। (সুনানে আবু দাউদ)

জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, আপনার সাহাবিদের দিন যেন তারা তালবিয়া উচ্চস্বরে পাঠ করে, কারণ এটি হজের অন্যতম নিদর্শন। (সুনানে ইবনে মাজা)

আবু বকর সিদ্দীক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, আজ্জ (উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ) ও সাজ্জ (কোরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করা)। (সুনানে তিরমিজি)

সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোনো মুসলমান যখন তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার ডানে-বামে থাকা পাথর, গাছ বা মাটিও তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে, পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত। (সুনানে তিরমিজি)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন কেউ তালবিয়া পাঠ করে বা তাকবির বলে, তখন তাকে সুসংবাদ দেওয়া হয়। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, জান্নাতের সুসংবাদ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (মু’জামে আওসাত)

ওএফএফ/জেআইএম