বাংলাদেশের রাজনীতির চলমান নাটকীয়তার একদিকে আদালতের রায়ে বিএনপির সাময়িক স্বস্তি, অন্যদিকে রাজপথে ফের সক্রিয় হওয়ার আলটিমেটাম- এই দ্বৈত বাস্তবতা যেন দলটির বর্তমান রাজনৈতিক কৌশলেরই বহিঃপ্রকাশ।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতাল থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বার্তায় ইশরাক হোসেনের শপথের বিষয়ে আদালতের দেওয়া রায়কে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি একে আইনের প্রতি সম্মান বলেও উল্লেখ করেন এবং ইশরাক হোসেনকে শপথ নিতে দেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে একই দিন দুপুর সোয়া ২টার দিকে ইশরাক হোসেন নিজেও ফেসবুকে এক পোস্টে দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের রাস্তায় থাকার আহ্বান জানান। পোস্টে তিনি লেখেন, রাস্তা তো ছাড়বেন না, আরও বিস্তৃত করতে হবে।
ইশরাকের আহ্বানে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করেন তার সমর্থকরা। তারাও দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি সামনে এনেছেন।
Advertisement
তবে সবশেষ বিকেল সাড়ে ৫টায় কাকরাইল মোড়ে দাঁড়িয়ে ভিন্ন সুরে কথা বলেন তরুণ নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ৪৮ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এরপর আমরা রাজপথে নামব।
এর পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতির নামে প্রশাসন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
দ্বৈত কণ্ঠ, সমান্তরাল কৌশলবিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই দুই নেতার কণ্ঠে দুই ধরনের বার্তা- একটি আন্তর্জাতিক মহলের উদ্দেশে, আরেকটি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে।
রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন জাগো নিউজকে বলেন, ফখরুলের শান্ত বার্তা আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে। অন্যদিকে ইশরাকের আলটিমেটাম রাজপথে চাপ তৈরির চেষ্টা। এটি একটি দ্বৈত কৌশল, যা সচেতনভাবে নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে যদি ডা. শাহাদাতকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া যায়, তাহলে ইশরাককে কেন নয় চট্টগ্রাম প্রধান উপদেষ্টার শহর, এ কারণে সেখানে তার পছন্দের লোক বসানো হয়েছে, কিন্তু ঢাকায় তাকে (ইশরাক) বসানো হচ্ছে না- এটা এক ধরনের রাজনৈতিক বৈষম্য। সরকারের এই দ্বৈত আচরণই আন্দোলনকে যৌক্তিকতা দিচ্ছে।
জনতার কাছে ক্ষমার বার্তাইশরাক তার বক্তব্যে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এটি একটি বিরল ঘটনা। এর মাধ্যমে আন্দোলনকেও জনবান্ধবভাবে উপস্থাপন করার কৌশল লক্ষ্য করা যায়। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি, জনগণের কষ্টের কথা মাথায় রেখেই আজ একদিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করেছি।
আদালত ও আইনের প্রতি সম্মানবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে সুতরাং আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আশা করব নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শিগগির সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে।
আন্দোলন সমর্থকদের দৃঢ়তাইশরাকের আন্দোলনের সমর্থনে সক্রিয় কর্মী মাহফুজ কবির মুক্তা জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের আন্দোলন চলমান। আমরা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ না করেন, তাহলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে। মহাসচিব যে কথাটি বলেছেন সেটি দলের সিদ্ধান্ত। আর দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আন্দোলন ঘোষণা করেছি। যদিও এ আন্দোলন ঢাকাবাসীর ছিল।
পরে এটি দলীয়ভাবে রূপ নেয় এবং দলীয় আন্দোলন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মাননীয় মহাসচিব জনগণের ভোগান্তির বিষয়ে যে বার্তা দিয়েছেন, সেটি দলের সিদ্ধান্ত এবং আজকের আন্দোলনের আলটিমেটাম সেটাও দলের সিদ্ধান্ত। এই আলটিমেটামের আগাম খবরটি মহাসচিব দিয়েছেন। এবং পরে আন্দোলনের মাঠে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন। আমরা সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে আমাদের যে মূল দাবি মেয়র হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাককে শপথ পড়ানো এবং দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ- এই দাবি পূরণ না হলে পরে দলীয়ভাবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে। অতএব আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায়নি, এটি নতুন মাত্রা পাবে।
কেএইচ/এএমএ/এমএফএ/জেআইএম