প্রথম চাকরি মানেই নতুন এক জগতে প্রবেশ। শিক্ষাজীবনের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কেউ কর্মজীবনে পা রাখে, তখন চারপাশটাই যেন বদলে যায়। দায়িত্ব, প্রতিযোগিতা, অনিশ্চয়তা আর সম্ভাবনার এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে প্রতিটি নবীন পেশাজীবীর মনে। এই শুরুটাই ঠিকভাবে না হলে হতাশা, ভুল সিদ্ধান্ত আর পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। অথচ কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য খুব জটিল কিছু করার দরকার নেই। দরকার সঠিক মানসিকতা, কিছু গুণাবলির চর্চা এবং ক্রমাগত শেখার ইচ্ছা।
Advertisement
চলুন জেনে নেই, নবীন ও তরুণদের জন্য কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা অনুসরণ করলে তারা কর্মজীবনে সফল ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে।
>> নিজের কাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করুনকর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার পর সবচেয়ে প্রথম যেটা বুঝতে হবে, তা হলো আপনার দায়িত্ব কী? আপনি যে পদে আছেন, সেখানে আপনার কাছ থেকে কী ধরনের আউটপুট প্রত্যাশা করা হয়? এটা না বুঝেই অনেকে কাজ শুরু করে দেন। ফলে কাজের ভুল বোঝাবুঝি, ফলাফল খারাপ হওয়া কিংবা নেতিবাচক ফিডব্যাকের মুখোমুখি হতে হয়।
প্রথমেই বস বা অভিজ্ঞ সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নিজের কাজ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে। কাজ বুঝে নেওয়া মানে শুধু ইনস্ট্রাকশন জানা নয়, বরং কাজটির আসল উদ্দেশ্য কী, তা প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় জানা।
Advertisement
বর্তমান সময় খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আজ যেটা গুরুত্বপূর্ণ, কাল সেটা হয়তো তেমন প্রয়োজনীয় থাকবে না। তাই নতুন কিছু শেখার আগ্রহ না থাকলে আপনি দ্রুত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন।
চেষ্টা করুন প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে নিজের কাজে সম্পর্কিত কিছু পড়তে বা শিখতে। এখন ইউটিউব, অনলাইন কোর্স, ব্লগ ও পডকাস্টের মাধ্যমে শেখার অসংখ্য উপায় রয়েছে। নিজের স্কিল বাড়ানো মানে নিজের বাজারমূল্য বাড়ানো এটাই সফল কর্মজীবনের প্রথম ধাপ।
আরও পড়ুন:
শৈশবেই রোপণ হোক মার্জিত আচরণের বীজ চাহিদার চাপে নয়, বুদ্ধির ব্যবস্থায় বাঁচুন >> সময় মেনে, গুছিয়ে কাজ করার অভ্যাস গড়ুনসফল কর্মীদের অন্যতম বড় গুণ হলো সময়ানুবর্তিতা ও কাজের গুছিয়ে করা। আপনার যদি প্রতিদিন সকালে এসে ভাবতে হয় ‘আজ কী করব?’, তাহলে আপনি প্রতিনিয়ত সময় নষ্ট করছেন।
Advertisement
একটি কাজের তালিকা বানান। আগের দিনই পরদিনের কাজের পরিকল্পনা করে রাখুন। এতে সময় নষ্ট হবে না এবং আপনি অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ হবেন। সময় মেনে কাজ করলে আপনার ওপর অন্যদের আস্থা তৈরি হবে; যা ক্যারিয়ারে অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
>> কাজকে শুধু চাকরি হিসেবে না দেখে, নিজের দায়িত্ব ভাবুনঅনেকেই মনে করেন ‘যেটুকু বলা হয়েছে সেটুকুই করব’ এটাই যথেষ্ট। কিন্তু ক্যারিয়ারে যারা এগিয়ে যান, তারা এই মানসিকতা নিয়ে এগোয় না। তারা প্রতিষ্ঠানকে নিজের বলে ভাবেন। কাজের মধ্যে দায়বদ্ধতা, আন্তরিকতা ও নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কোনো সমস্যা দেখলে ‘এটা আমার কাজ না’ না বলে বরং সেটা সমাধানে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। এই মানসিকতা আপনাকে একজন দায়িত্ববান পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তুলবে।
>> ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন সহকর্মীদের সঙ্গেকোনো অফিসেই আপনি একা কাজ করছেন না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে টিমওয়ার্কই সবচেয়ে বড় শক্তি। আর ভালো টিমওয়ার্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগিতা এবং ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে।
সহকর্মীদের প্রতি সদয় হোন, তাদের সময়ের মূল্য দিন। ঝগড়া-বিবাদ বা অফিস পলিটিক্স থেকে দূরে থাকুন। কারোর নামে বদনাম করার চেয়ে তার পাশে দাঁড়ান, উৎসাহ দিন। এতে আপনি শুধু পছন্দের সহকর্মী হবেন না, বরং অন্যরাও আপনার পজিটিভ অ্যাটিটিউড থেকে অনুপ্রাণিত হবে।
>> চ্যালেঞ্জকে ভয় নয়, গ্রহণ করুনপ্রথমদিকে অনেক কাজই কঠিন মনে হতে পারে। নতুন সফটওয়্যার, ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট, রিপোর্ট লেখা সবই যেন পাহাড়সম মনে হয়। কিন্তু এখানেই আপনার প্রবৃদ্ধির সুযোগ লুকিয়ে থাকে। কোনো কঠিন কাজ এলে ভয় না পেয়ে শেখার চেষ্টা করুন। শুরুতে ভুল হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে আপনি দক্ষ হয়ে উঠবেন। মনে রাখবেন, যত বেশি চ্যালেঞ্জ আপনি গ্রহণ করবেন, তত দ্রুত আপনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাবেন।
>> নিজের সীমাবদ্ধতা চিনে নিন এবং সেগুলো কাটিয়ে উঠুননিজেকে সব বিষয়ে পারফেক্ট ভাবা একটি বড় ভুল। বরং নিজের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে তা নিয়ে কাজ করুন। আপনি কি সময়মতো কাজ শেষ করতে পারেন না? নাকি প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে পড়েন? এমন সমস্যাগুলো লুকানোর চেষ্টা না করে তা কাটিয়ে উঠার পরিকল্পনা করুন। যখন আপনি নিজের উন্নয়ন নিয়ে সচেতন হবেন, তখন আপনাকে কেউ থামাতে পারবে না।
>> নিজের কাজের মূল্যায়ন করুন এবং লক্ষ্য স্থির রাখুনসপ্তাহ শেষে নিজের কাজের দিকে ফিরে তাকান। আপনি কোন কাজটা ভালো করেছেন, কোনটা আরও ভালো হতে পারতো? এভাবে নিজেকে মূল্যায়নের অভ্যাস তৈরি করুন। এতে আপনার উন্নতি নিজের চোখে পড়বে এবং আপনার নিজের দিকেই একটা ইতিবাচক চাপ থাকবে; যেন আরও ভালো করতে পারেন।
একই সঙ্গে নিজের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনি আগামী ছয় মাসে কী শিখতে চান? এক বছরে কোথায় দেখতে চান নিজেকে? লক্ষ্য স্থির থাকলে পথ হারানোর সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
একজন নবীন কর্মী হিসেবে আপনার সামনে অনেক সুযোগ, আবার চ্যালেঞ্জও। অনেকে এই সময়টায় হতাশ হয়ে যায়, আবার কেউ কেউ সঠিক দিকনির্দেশনা ও মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যায় সাফল্যের চূড়ায়। আপনিও পারবেন যদি আপনি আত্মবিশ্বাসী থাকেন, নিজের কাজকে গুরুত্ব দেন এবং প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করেন। ভুল হতেই পারে, কিন্তু সেখান থেকেই শিখে এগিয়ে যেতে হবে। এই পথ কঠিন তবে অসম্ভব নয়, যদি আপনি প্রতিটি দিন নিজের সর্বোচ্চটা দেন।
জেএস/এমএস