ভারত ও পাকিস্তানে প্রবল বৃষ্টিপাত, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারতের রাজধানী দিল্লি ও আশপাশের এলাকাগুলোতে রাতভর চলা তীব্র ঝড়বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট, উপড়ে গেছে গাছ এবং ব্যাহত হয়েছে প্লেন চলাচল। অন্যদিকে, পাকিস্তানে ঝড়বৃষ্টিতে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও ৯০ জনের বেশি।
Advertisement
দিল্লির মৌসুমি দপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, ভারতীয় রাজধানীতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে ৮১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং ঘণ্টায় ৮২ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেছে। এই তাণ্ডবে মতি বাগ, মিন্টো রোড, দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট এবং দীন দয়াল উপাধ্যায় মার্গ-সহ শহরের বহু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন>>
পশ্চিমবঙ্গে ভাঙলো আত্রাই নদীর বাঁধ, প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে কাশ্মীরে ভারী বৃষ্টির পর ভূমিধস, নিহত ৩ ধুলোঝড়ে বিপর্যস্ত দিল্লি, ২০০ ফ্লাইট বিলম্বিতদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। ইন্ডিগো জানায়, মাঝরাতে কিছু সময়ের জন্য ফ্লাইট অপারেশন স্থগিত ছিল, যদিও পরে তা স্বাভাবিক হয়। ভোর ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত গড়ে ৪৬ মিনিট বিলম্বে উড়ছে ফ্লাইট।
Advertisement
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে এবং লোকজনকে খোলা জায়গা এড়িয়ে চলতে, গাছের নিচে আশ্রয় না নিতে ও পানির কাছে না যেতে অনুরোধ করেছে। এছাড়া বুধবার দিল্লিতে প্রবল ধূলিঝড় এবং বজ্রঝড় দেখা যায়, যার কারণে শহরের বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।
এই বৃষ্টি শুরু হয়েছে এমন সময়ে যখন মৌসুমি বায়ু এক সপ্তাহ আগেই কেরালায় পৌঁছে গেছে, যা ২০০৯ সালের পর সবচেয়ে তাড়াতাড়ি আগমন।
পাকিস্তান: ঝড়বৃষ্টিতে প্রাণহানি, বিধ্বস্ত অবকাঠামোশনিবার পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ৯০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। লাহোর, জেলম, সিয়ালকোট, মুজাফফরগড়, শেখুপুরা, নানকানা সাহিব, অ্যাটক, মুলতান, রাজনপুর, হাফিজাবাদ, মিয়ানওয়ালি, ঝাং ও লেয়াহ অঞ্চলে ঘরবাড়ির ছাদ ও দেয়াল ধসে পড়ে, গাছ ও বিলবোর্ড পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
পাঞ্জাব প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, রাত ১০টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩ জন এবং আহত ৯২ জন। পরে এই সংখ্যা আরও বাড়ে।
Advertisement
ইসলামাবাদেও প্রবল বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টিতে নিচু এলাকাগুলো ডুবে গেছে এবং বহু গাছ পড়ে গেছে। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ফসল ও বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
করাচি থেকে লাহোরগামী একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ তীব্র ঝাঁকুনির মুখে পড়ে অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়।
পাঞ্জাবের বিভিন্ন জেলায় মোটরওয়ের একাধিক অংশ নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে মুলতান, খানেওয়াল, ভেহারি ও সাহিওয়াল জেলাগুলিতে সাময়িক ব্ল্যাকআউট হয়েছে।
লাহোরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা সংস্থা জানিয়েছে, তারা পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সতর্কতা জারিদুই দেশেই আবহাওয়া অফিস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে। এছাড়া দুর্বল অবকাঠামো বা বিদ্যুৎ লাইনের কাছাকাছি না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়ার আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি, ডনকেএএ/