আকাশ থেকে ঝরছে অনবরত বৃষ্টি। এতে পথ-ঘাট ভিজে একাকার। সড়কের কোথাও কোথাও জমে আছে বৃষ্টির পানি। এমনই আবহাওয়ায় চলছে সড়কের কার্পেটিং। বৃষ্টিতে সড়কে দেওয়া প্রাইম কোট ধুয়ে গেলেও সেদিকে কোনো নজর নেই সংশ্লিষ্টদের।
Advertisement
গত দুদিন সকালে শরীয়তপুরের একটি গ্রামীণ সড়কে এমন অবস্থার মধ্যেই হয়েছে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, নিয়ম মেনেই কাজ করা হয়েছেন। বিষয়টি অবগত হয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী।
এলজিইডি সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের চর সোনামুখী দাড়িয়া বাড়ি থেকে পশ্চিম সোনামুখী পর্যন্ত এক হাজার ৮০০ মিটার সড়কটি সংস্কার করার জন্য ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। রাজিব হোসেন নামের স্থানীয় এক ঠিকাদার কাজটি করছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কটিতে শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছেন ঠিকাদারের লোকজন। সড়কটির দুপাশে (এজিং) বেশ কিছু স্থান এবং খোয়ায় নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে ঢালাইয়ের জন্য সড়কে প্রাইম কোট দেওয়া হয়। তবে সেটি বৃষ্টিতে ধুয়ে গেলেও নতুন করে আর প্রাইম কোট দেওয়া হয়নি। তাছাড়া গত দুদিন (শনি ও রোববার) ধরে সকালে বৃষ্টির মধ্যেই সড়কে পিচ ঢালাইয়ের (কার্পেটিং) কাজ হয়েছে।
Advertisement
শনিবার (২৪ মে) সকাল ৮টা ৫৯ মিনিট ও রোববার ৭টা ২০ মিনিটে সরেজমিনে দেখা যায়, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আধা ঘণ্টার ওপরে শুরু হওয়া বৃষ্টির মাঝেই চলছে কার্পেটিং। শ্রমিকরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ঢালাই কাজ চালু রেখেছেন। সড়কের পাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সেগুলো বেলচার সাহায্যে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরপর সেই স্থানেই পিচ ঢালাই দিচ্ছেন তারা। তাছাড়া সড়কে দেওয়া প্রাইম কোট বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাড়িয়া বলেন, বৃষ্টির মধ্যেই পিচ ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে। এভাবে যদি অনিয়ম করে সড়কে কাজ করা হয়., তাহলে এই সড়ক বেশিদিন টিকবে না। আমরা চাই, বৃষ্টির মধ্যে কাজ বন্ধ রেখে নতুন করে প্রাইম কোট দিয়ে আবার খড়ার মধ্যে কাজ করা হোক।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল কুলু বলেন, রাস্তায় দুপাশে আর কিছু কিছু জায়গায় পচা ইট ব্যবহার করেছেন ঠিকাদার। তখন আমাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তবে তারা আমাদের কথা শোনেননি। এবার তারা গত দুদিন সকালে বৃষ্টির মধ্যে পিচ ঢালাই করেছেন। অনেক জায়গায় তো পানিও জমা ছিল। এভাবে নয়-ছয়ভাবে কাজ করলে সড়কটি মজবুত হবে না।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের কার্যসহকারী শরীয়তউল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি ছাতার সাহায্যে মুখ লুকিয়ে সামনে চলে যান। যদিও পরে তিনি কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন শ্রমিকদের।
Advertisement
বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার রাজিব হোসেন বলেন, বৃষ্টির মধ্যে কোনো কাজ হয়নি। যেটুকু সময় কাজ হয়েছে তা নিয়ম মেনেই হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির মধ্যে কাজ করলে সেটি টেকসই হবে না। আমরা খবর পেয়ে ঠিকাদারকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। রোদ না ওঠা পর্যন্ত কাজ চালু করা যাবে না।
বিধান মজুমদার অনি/এসআর/জিকেএস