দেশজুড়ে

মেশিনে চাষাবাদে বেড়েছে ফলন, কমেছে পরিশ্রম-খরচ

মেশিনে চাষাবাদে বেড়েছে ফলন, কমেছে পরিশ্রম-খরচ

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর গ্রাম। গ্রামের মাঠ থেকে কান এলো মেশিনের গর গর শব্দ। একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে। ধান কাটা, মাড়াই এমনকি ধান বস্তায় ভরা হচ্ছে একই মেশিনে।

Advertisement

কৃষকরা বলছেন, মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে খরচ ও পরিশ্রম কম। এজন্য তারা খুশি। ধান কাটার জন্য শ্রমিকের পেছনে ছুটতে হয় না।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে উদ্বুদ্ধ করতে দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৫০ একর বোরো ধানের জমিতে সমলয় চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনী করা হয়। এই কর্মসূচির আওতায় সিডলিং ট্রেতে চারা তৈরি করে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্রের সাহায্যে রোপণ করা হয়। ধান কাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র। কৃষকদের চাহিদার ভিত্তিতে চাষাবাদ করা হয়েছে ব্রি-ধান ১০২।

সূত্র আরও জানায়, ব্রি-ধান ১০২ জাতের ধান চাষাবাদ করে প্রতি একর জমিতে গড়ে ৯১ মণ করে ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। কোনো কোনো জমিতে ফলন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ মণ। ৫০ একরে প্রায় ৯০০ মণ অতিরিক্ত ধান উৎপাদিত হয়েছে ‌‘সমলয়’ চাষাবাদ (বিশেষ পদ্ধতিতে চাষাবাদ) থেকে। সরকার নির্ধারিত ৩৬ টাকা কেজি করে যার বাজারমূল্য ১২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

Advertisement

আরও পড়ুন:

স্ট্রবেরি চাষে গৃহবধূ হনুফার চমক বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ, ফলনে খুশি কৃষক চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের বীজে মাথায় হাত শতাধিক ভুট্টাচাষির

নতুন জাতের ধান ও সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে প্রতি একরে সাশ্রয় হয়েছে ১৯ হাজার ৮ ১৫ টাকা। ৫০ একরে সাশ্রয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ৯০ হাজার ৭৫০ টাকা।

কৃষক সানু মিয়া, নুর হোসেন ও নজরুল ইসলাম বলেন, ‌‌‘যন্ত্রের সাহায্যে ৩০ দিন বয়সী চারা রোপণের ফলে ধানগাছের কার্যকরী কুশির সংখ্যা বেড়েছে। এটাই ভালো ফলনের মূল কারণ। এছাড়া ব্রি ধান ১০২ জাতের ভালো ফলন হয়েছে।’ কিষানি অরুণা বেগম ও সাকিনা বেগম বলেন, ‘ধান তোলার মৌসুমে বাড়ির নারীদের কষ্টের শেষ থাকে না। ধান মাড়াইতে দিন-রাত এক করে ফেলতে হয়। বাড়ির শিশুদের যত্ন ,রান্না করা ও খাবারের সময় মিলতো না। এখন মেশিনে টিপ দিলে ধান কাটা, মাড়াই শেষ। বস্তায় ধান ভরে বাড়ি নিয়ে যাই। খড় শুকাতে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয় না। মেশিনে মাড়াই ও কাটার কারণে পরিশ্রম অনেক কমে গেছে। এছাড়া খরচও কমেছে।’

কম্বাইন হারভেস্টারের উদ্যোক্তা এমদাদুল হক বলেন, ‘প্রথম দিকে আগ্রহী না হলেও এবার মেশিনে ধান লাগানো ও মাড়াইতে আগ্রহ বেড়েছে। এবার ৫০ একর জমিতে মেশিনে ধান লাগানো হয়েছে। আগামীতে তা ১০০ একর ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

Advertisement

মেশিনে লাগানো জমিতে কুশি বেশি হয় জানিয়ে উপসহকারী কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, গতবছর পার্টনার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এক একরের একটি ব্রি ধান ১০২ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়। জমির ফলন দেখে এবছর কৃষকরা ব্রি ধান ১০২ জাতের ধান চাষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় বলেন, মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সমলয় চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীটি বাস্তবায়ন করেছি। প্রথমত, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ; বিশেষ করে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের ব্যবহারকে জনপ্রিয়করণ। দ্বিতীয়ত, বোরো ধানের নতুন জাত হিসেবে ব্রি ধান ১০২ এর সম্প্রসারণ। দুটি বিষয়েই বেশ ইতিবাচক ফলাফল মাঠ থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসনাত খান বলেন, সমলয় চাষাবাদের ফলে কৃষকের পরিশ্রম, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়; আর ফলন বাড়ে। আগামীতে কৃষকের উন্নয়নে সব কার্যক্রমে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।

জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/এমএস