জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে (কগনিজেন্স) অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
Advertisement
এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম কোনো মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার পর এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানিতে আওয়ামীলীগের রাজনীতির ১৯৭১ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামল এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের পতন পর্যন্ত প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর।
এরপর পিলখানা হত্যাকাণ্ড, জিয়া পরিবার ও বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে বিচারবিভাগের মাধ্যমে বিরোধী মত দমনে স্বচেষ্ট ছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। এছাড়া লুট, অর্থ পাচার, সাতশতাধিক মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা, কয়েকশ মানুষ গুম ও আয়নাঘরে আটকিয়ে নির্যাতনে বর্ণনা তুলে ধরেন তাজুল ইসলাম।
Advertisement
এরপর কোটা আন্দোলন কিভাবে শুরু। ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে উত্তেজিত, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকর শ্লোগান ও পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ৯ দফা দাবি থেকে একদফা। এসব আংশিক বিষয় তুলে ধরে পদত্যাগের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তাজুল ইসলাম। তিনি আরও জানান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আলাদা মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এই মামলার প্রেক্ষাপটে পটভূমিতে এসব ঘটনা উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার জন্য ৫ আগস্টের আগেই স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে বলেছিলেন পদত্যাগ করতে।
পরে গণভবনে শেখ হাসিনার পা ধরেছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণত সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে নিষেধ করেছিলেন।
রোববার (২৫ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরলেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের সামনে লিখিত এসব তথ্য পড়ে শোনান তিনি।
Advertisement
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গত ৪ আগস্ট পুলিশের আইজিপি, সাবেক পুলিশের প্রধান ও অন্যান্যদের বৈঠকে আলোচনা হয় রাজধানীতে ঢোকার মুখে গুলি চালিয়ে মানুষ ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে, কিন্তু তারা তাতে রাজী হননি। সেখানে বলা হয়েছিল কিছু লোককে গুলি করে মারলে ঢাকায় কোন লোক ঢোকবে না।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেষ সময়েও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং আরও রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার আগে গত ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপ দিয়েছিলেন তিনি। তবে পরিস্থিতি যে একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেটা তিনি কিছুতেই মানতে চাচ্ছিলেন না। পরে পরিবারের সদস্যরাসহ বোঝানোর পর পদত্যাগে রাজি হন তিনি। এরপর দ্রুততম সময়ে পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে করে গোপনে বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
এফএইচ /এমএসএম