বিষপান করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত চারজন। রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তারা বিষপান করেন। তাৎক্ষণিক তাদের অ্যাম্বুলেন্স যোগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা আশঙ্কামুক্ত।
Advertisement
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী জাগোনিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দুপুরে জুলাই ফাউন্ডেশন এর সিইও হাসপাতালে আসেন। আমরা আহতদের বিষয়ে বৈঠক করছিলাম। এরই মধ্যে আহতদের কয়েকজন ফাউন্ডেশন এর সিইও লে. কর্নেল কামাল আকবর এর সঙ্গে কথা বলতে আসে। সিইও তাদের বলেছে, আমি তোমাদের বিষয়ে পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে আছি। তোমরা অপেক্ষা করো, বৈঠক শেষে তোমাদের সঙ্গে কথা বলবো। মিটিং চলাকালীন খবর পাই তাদের চারজন বিষপান করছেন। তাৎক্ষণিক তাদের অম্ব্যুলেন্সে করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। তারা আশঙ্কামুক্ত।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, বিষপান করা চারজন হলেন, মারুফ হোসেন (২২), আমির হামজা শিমুল (১৮), আবু তাহের ও সাগর।
Advertisement
এদিকে, সন্ধ্যায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও (অবসর প্রাপ্ত) লে. কর্নেল কামাল আকবার ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী এক বিশেষ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। এ সভায় জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা, সামাজিক মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ জীবনমান নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে তাদের নানাবিধ সমস্যা, উদ্বেগ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা উন্মোচিত হয়।
এই আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি কোনো প্রকার অবহেলা বা অবমূল্যায়ন যেন না হয়, তা নিশ্চিত করা। সভায় এই মহান মুক্তিকামীদের জীবনমান উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও গৃহীত হয়।
কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক খবর আসে যে জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে ৪ জন যোদ্ধা, ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশা, দুশ্চিন্তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে নিজেদের জীবনের প্রতি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষপান করেন। কিছুদিন আগে বিদেশ চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এদের মধ্যে থেকে যোদ্ধা আছেন। এ ঘটনা আমাদের হৃদয়কে গভীরভাবে আহত করেছে। এটি আমাদের সকলের জন্য এক কঠিন মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা।
তাৎক্ষণিকভাবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং হসপিটালের ব্যবস্থাপনায় দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে, আক্রান্ত যোদ্ধাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্থানান্তর করেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। তাদের বাঁচাতে যে মানবিক তৎপরতা চালানো হয়, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
Advertisement
পরবর্তীতে ফাউন্ডেশনের সিইও নিজে উপস্থিত থেকে বাকি যোদ্ধাদের আশ্বস্ত করেন এবং বলেন, জুলাই যোদ্ধারা আমাদের অহংকার। তাদের মনোবল যেন ভেঙে না পড়ে, সে জন্য ফাউন্ডেশন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। চিকিৎসা, পুনর্বাসন, ও সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে ফাউন্ডেশন সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সাথে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করছি। আমাদের প্রতিটি যোদ্ধা যেন সাহসিকতার সঙ্গে জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে পারে, সে জন্য আমরা তাদের পাশে আছি ও থাকবো।
এই মুহূর্তে আমাদের দরকার আরও সহানুভূতি, মানবিকতা ও সচেতন উদ্যোগ। এই সাহসী যোদ্ধারা যেন কখনোই আর নিজেরা একাকী মনে না করেন—এই বার্তাই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার।
এসইউজে/এমএসএম