বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আবাসিক হলের সিট বাণিজ্য, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ এবং লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আজীবন বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। ১১১তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
Advertisement
এর আগে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ১০৮তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুসরণে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা হয়। কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির বিভিন্ন ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সিট বাণিজ্য অথবা লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হবে এবং তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তারা মনে করছেন, এই কঠোর সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
Advertisement
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি, সিট বাণিজ্য, অনিয়ম, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। উত্তরের বাতিঘর খ্যাত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় মেধা, মননশীলতা ও গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠুক সেটিই প্রত্যাশা থাকবে।
তবে এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেরোবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল-আমিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক ভাবধারার রাজনীতির কথা বলছি। উপাচার্যের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি, স্মারকলিপিও দিয়েছি। ফ্যাসিবাদের দোসররা এই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য শুরু থেকে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কারা কাজ করবে? এসব বিষয় নিয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র চর্চা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটা মহল নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতে উঠেছে। খুব দ্রুতই আমরা দলের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি দেবো।
এ বিষয়ে বেরোবি শাখা শিবিরের সভাপতি সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, একটি সচেতন ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবির সবসময় টেন্ডারবাজি, সিট বাণিজ্য ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চাই। যেখানে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি এসব থাকবে না। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে সবসময় কথা বলবে।
ছাত্রলীগকে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, বিগত সময় ছাত্রলীগ ছিল একটি লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন, যার ফলে আওয়ামী লীগের সব এজেন্ডা তারা বাস্তবায়ন করতো। এই লেজুড়বৃত্তিক থেকে যখন ছাত্র সংগঠনগুলো বেরিয়ে আসতে পারবে তখনই গঠনমূলক ও ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারবে।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী এই সিদ্ধান্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশে জ্ঞান অর্জন করুক। কোনো প্রকার অনৈতিক বা সমাজবিরোধী কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
ফারহান সাদিক সাজু/এফএ/এএসএম