খেলাধুলা

আমিতো আর যেচে চেয়ারে বসিনি, আপনারাই বসিয়েছেন: ফারুক

আমিতো আর যেচে চেয়ারে বসিনি, আপনারাই বসিয়েছেন: ফারুক

বৃহস্পতিবার সকাল হতে না হতেই ক্রিকেট পাড়ায় চাউর হয়ে গেছে, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে সরিয়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবি প্রধানের চেয়ারে বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা ফারুক আহমেদকে পদত্যাগের কথা বলেছেন।

Advertisement

আসলে কি হয়েছে? কেন হয়েছে? হঠাৎ ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়াই বা কেন ফারুক আহমেদকে সরানোর কথা বলছেন?

মূলতঃ কিছুদিন আগে তাকে নিয়ে খানিক বির্বতকর ঘটনার অবতারণা হয়েছে। বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট এক ব্যাংক থেকে সরিয়ে অন্য ব্যাংকে বাড়তি ‘ইন্টারেস্টে’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফারুক আহমেদ খানিক বিতর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন। তার বিপক্ষে অর্থ আত্মসাতের কোনো অভিযোগ কেউ করেননি। তবে, অভিযোগ উঠেছে বোর্ডের সবার সাথে কথা না বলে ফিক্সড ডিপোজিট সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কিন্তু এর বাইরে বিসিবি সভাপতি হিসেবে ফারুকের দক্ষতা, সময় দেয়া এবং নানা কাজকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা ও সভাপতি হিসেবে বোর্ডের কাজে গতিশীলতা আনার চেষ্টা নিয়ে বড় কোন অভিযোগ নেই।

Advertisement

এমন অবস্থায় হঠাৎ ফারুক আহমেদকে সরিয়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে কেন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য বোর্ড প্রধান করার চিন্তা? তা নিয়ে ক্রিকেট অনুরাগি মহল থেকে শুরু করে সবার মাঝেই জেগেছে প্রশ্ন।

সবার একটাই কথা, হঠাৎ এমন কি হলো যে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুককে সরিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য সভাপতি নিয়োগের চিন্তা এবং তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ফারুককে সরে দাঁড়ানোর কথা বলা হলো?

ফারুক কী সত্যিই পদত্যাগ করবেন? এভাবে সরে যাওয়ার অর্থ, দায় মেনে পদত্যাগ। ফারুক আহমেদ কি গায়ে কালো দাগ নিয়ে সরে যেতে রাজি হবেন? এ প্রশ্ন কোটি ক্রিকেট অনুরাগির।

ফারুক আহমেদ নিজেই দিয়েছেন এ প্রশ্নের জবাব। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাগো নিউজের সাথে আলাপে ফারুক বলেন, ‘আমাকে বিসিবি সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।’

Advertisement

কে বলেছেন? সেটা কি সরকারের উর্ধ্বতন মহলের কারো নির্দেশ? ফারুকের জবাব, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টা সাহেব আমাকে বলেছেন, বিসিবি প্রধান পদ থেকে সড়ে দাঁড়াতে।’

আপনি কি বলেছেন? ফারুকের কথা, ‘আমি তাকে (ক্রীড়া উপদেষ্টাকে) বলেছি, আমি তো আর নিজে যেচে বিসিবি প্রধানের চেয়ারে বসিনি। জানতে চেয়েছি, আমি কি আপনাকে ফোন করে বিসিবি সভাপতি হতে চেয়েছিলাম? তিনি বলেছেন না। তাহলে এখন আমাকে সরিয়ে দেয়া কথা উঠছে কেন?’ সে সঙ্গে ফারুক জানিয়ে দিয়েছেন, নিজে থেকে তিনি পদত্যাগ করবেন না। ফারুক আহমেদ জাগো নিউজকে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে সরাসরি জানতে চেয়েছেন, ‘আমার অপরাধ ও ব্যর্থতা কী? আমার বিপক্ষে আপনাদের অভিযোগটাই বা কী?’

ক্রীড়া উপদেষ্টা নাকি জবাবে বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বিপিএল নিয়ে আপনার ওপর অসন্তুষ্ট, তাই। ‘

তার মানে ধরেই নেয়া যায়, আসলে প্রধান উপদেষ্টার অসন্তুষ্টির কারণেই ফারুককে সরে যাওয়ার কথা বলেছেন আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। যোগাযোগ করে জানা গেছে, বিসিবিতে ফারুকপন্থীরা তা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের কথা, বিপিএলের ইতিহাসে সর্বাধিক ‘রেভিনিউ’ এসেছে এবার। হ্যাঁ, দুটি দল পেমেন্ট নিয়ে ঝামেলা করেছে। অনেক পানিঘোলা হয়েছে; কিন্তু তার দায়তো আর পুরো বিসিবির না।

তবে কি আপনি শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ানোর চিন্তা করছেন? ‘নাহ! আমি তাৎক্ষণিকভাবে কোনোই সিদ্ধান্ত দেইনি। ক্রীড়া উপদেষ্টাকে বলেছি, আমি আমার পরিবার, সুহৃদ-শুভানুধ্যায়ীদের সাথে কথা বলে জানাবো।’ তবে ভেতরের খবর, ফারুক এভাবে পদত্যাগ করতে চান না। কারণ, পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ালে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়েই সরে যেতে হবে। আর পদচ্যুত হলে তখন তিনি নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারবেন এবং সবার কাছেও বলতে পারবেন, চাপের মুখে আমাকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে।

আইসিসির কাছে বিসিবির ব্যাপারটা অন্যভাবে উত্থাপিত হবে। তখন আবার আইসিসির একটা চাপ নেমে আসতে পারে বিসিবির ওপর। আইসিসির গঠণতন্ত্রে পরিষ্কার বলা আছে, কোনো বোর্ডের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না। তেমনটা হলে, আবার নতুন জটিলতার উদ্ভব ঘটতে পারে।

কাজেই ফারুক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তাকে সরানো কঠিনই হবে। তিনি পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিসিবিতে সরকারী হস্তক্ষেপের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানই নিতে যাচ্ছেন। এখন শেষ পর্যন্ত কি হয়, সেটাই দেখার।

এআরবি/আইএইচএস/এএসএম