দেশজুড়ে

মোংলা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজে ডাকাতির গোমর ফাঁস

মোংলা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজে ডাকাতির গোমর ফাঁস

মোংলা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজে ডাকাতির ঘটনার গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। খোদ জাহাজের নাবিকেরাই এ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জাহাজের নাবিক ও স্থানীয় জাহাজ চোরাকারবারিদের যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আটকও হয়েছেন জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান পিএনএন শিপিং লাইন্সের মালিকানাধীন এমভি সেঁজুতি জাহাজ ভারত থেকে পাথর বোঝাই করে গত বছরের ২২ জুন মোংলা বন্দরের বেসক্রিক এলাকায় নোঙর করে। এরপর জাহাজটি পণ্য খালাস কাজ শেষ করে। পণ্য খালাস শেষে জাহাজটি বন্দর ত্যাগের প্রস্তুতিও নেয়। কিন্তু ওই সময় বন্দরে থাকা অবস্থায় হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে জাহাজটির আর বন্দর ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। সেই থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই জাহাজটি প্রায় বছর খানেক সময় ধরে বন্দর চ্যানেলের বেসক্রিক এলাকায় অলস পড়ে রয়েছে। জাহাজটি চালু (চলাচল) না থাকায় বাকি পড়ে জাহাজের নাবিকদের বেতন। ফলে আর্থিক সংকটে থাকা জাহাজের নাবিকেরা স্থানীয় চোরাকারবারিদের যোগসাজশে কয়েক দফায় ওই জাহাজের মালামাল চুরি করে বিক্রি করে দেয়। এরপর সর্বশেষ জাহাজের নাবিকেরা স্থানীয় চোরাকারবারিদের সহায়তায় জাহাজটিতে ডাকাতি করায়।

কিন্তু সাজানো এ ডাকাতির ঘটনা জানাজানি হলে অভিযানে নামে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মঙ্গলবার (২৭) রাতে আটক হন ডাকাত সুমন হাওলাদার (২১), ডাকাতির মালের ক্রেতা সুমন হোসেন (৩০) ও ডাকাতির পরিকল্পনাকারী মূলহোতা জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় জাহাজের ডাকাতি করা বিভিন্ন ধরনের মালামাও।

এদিকে এ ঘটনায় বুধবার কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তরে (মোংলা) আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আবরার হাসান জানান, প্রাথমিকভাবে এটি একটি ডাকাতির ঘটনা মনে হলেও, জাহাজ কর্তৃপক্ষ, জাহাজের অফিসার ও ক্রু এবং আটক ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত সাজানো ডাকাতির ঘটনা। যেখানে জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য নাবিক ও স্থানীয় দুষ্কৃতকারীরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। জাহাজের অধিকাংশ নাবিক গত ৬-৭ মাস ধরে সঠিকভাবে বেতন পান না। এতে করে নাবিকদের মধ্যে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এ কারণে আর্থিক ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে ইতঃপূর্বেও জাহাজ থেকে বিভিন্ন গ্রুপ/ডাকাতের কাছে মেশিনারিজ পার্টস বিক্রি করা হয়। গ্রেফতাররা জানান, তারা জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে মিলে এই ডাকাতির নাটক সাজিয়ে লুটকৃত মালামাল বিক্রির মাধ্যমে অর্থ ভাগাভাগির পরিকল্পনা করেন।

Advertisement

আবু হোসাইন সুমন/এফএ/এএসএম