একটা ব্যস্ত সড়ক ধরে আপনি হেঁটে যাচ্ছেন বা গাড়ি চালাচ্ছেন। সামনে হঠাৎ চোখে পড়ে কিছু সাদা দাগ-জেব্রাক্রসিং। পাশে দেখা যায় একটা ত্রিভুজ আকৃতি, নিচে লেখা ‘স্লো’ (SLOW)। আবার কোথাও রাস্তায় আঁকা তীর চিহ্ন, কখনো বা রঙিন বাক্সে লেখা ‘স্কুল এহেড’ (School Ahead)। আমরা অনেকেই এগুলো দেখে পাশ কাটিয়ে যাই। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট ছোট চিহ্নই রাস্তার নীরব ভাষা; যা ঠিকঠাক না বুঝলে হতে পারে বড় বিপদ?
Advertisement
রাস্তায় আঁকা প্রতিটি চিহ্ন আসলে একটি ভাষা, যেটা বোঝা মানে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো। পথচারী থেকে শুরু করে চালক পর্যন্ত সবার দায়িত্ব এই চিহ্নগুলো জানা ও মানা। শহরের ব্যস্ততা, গন্তব্যের তাড়া কিংবা ফোনে মুখ গুঁজে থাকা কোনোটাই যেন আমাদের চোখে থাকা এই জরুরি সংকেতগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। জীবনের পথে গতি জরুরি, তবে সঠিক সংকেত জানা আরও জরুরি। কারণ, ভুল বুঝলে শুধু রাস্তা নয়, হারিয়ে যেতে পারে জীবনও।
রাস্তায় থাকা প্রতিটি চিহ্ন আসলে নিরাপত্তা, গতি আর সচেতনতার প্রতীক। এগুলো শুধু চালক নয়, পথচারী, সাইকেল আরোহী এমনকি শিশুদের জন্যও দিকনির্দেশনার কাজ করে। চলুন জেনে নেই রাস্তায় ব্যবহৃত চিহ্নগুলোর পেছনের উদ্দেশ্য ও বার্তা।
আরও পড়ুন:
Advertisement
সবচেয়ে পরিচিত রাস্তার চিহ্নের একটি হলো জেব্রাক্রসিং। সাদাকালো ডোরা দাগের মতো দেখতে এই চিহ্ন পথচারীদের রাস্তা পারাপারে নিরাপত্তা দেয়। যেখানে জেব্রাক্রসিং রয়েছে, সেখানে চালকদের গাড়ি থামিয়ে পথচারীকে আগে পার হতে দিতে হয়। জেব্রাক্রসিং নামটি এসেছে জেব্রা প্রাণীর গায়ের ডোরা দাগের সঙ্গে মিল রেখেই।
ত্রিভুজ চিহ্ন: সতর্ক হওয়ার সংকেতত্রিভুজ চিহ্ন সাধারণত সতর্কতা বোঝাতে ব্যবহার হয়। যেমন: রাস্তা সরু হয়ে আসছে, সামনে বাঁক রয়েছে কিংবা স্কুল–হাসপাতাল এলাকা শুরু হচ্ছে। এই চিহ্নগুলো দেখে চালকদের গতি কমাতে হয়, যেন তারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
তীর চিহ্ন: চলার দিক নির্দেশ করেরাস্তায় আঁকা তীর চিহ্ন গাড়ির গন্তব্য বা মোড় নির্দেশ করে। কোন লেনে থাকলে কোনদিকে যেতে পারবেন, সেটা বোঝাতে এই চিহ্নগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল লেনে থাকলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।
লেন মার্কিংস ও স্টপ লাইন: নিয়ন্ত্রণে গতিরাস্তায় বিভিন্ন ধরনের দাগ বা রেখা দেখা যায় যেমন-লেন বিভাজন, স্টপ লাইন ইত্যাদি। এগুলো যানবাহনের গতি ও অবস্থান ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লাল সিগনাল পড়লে গাড়ি কোথায় থামবে, সেই জায়গাটি নির্ধারণ করে স্টপ লাইন।
Advertisement
রাস্তায় বড় করে লেখা ‘STOP’ নির্দেশ দেয় একেবারে থেমে যাওয়ার জন্য। সাধারণত মোড় বা জংশনের আগে এমন নির্দেশনা থাকে। আবার ‘SLOW’ লেখা চালককে গতি কমাতে বলে। বিশেষ করে স্কুল এলাকা, হাসপাতাল বা আবাসিক এলাকায়।
স্কুল জোন ও শিশু চিহ্ন: অতিরিক্ত সতর্কতার বার্তাযেসব জায়গায় শিশু চলাচল বেশি (যেমন-স্কুলের সামনে) সেখানে আলাদা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এটি চালককে বিশেষভাবে সাবধান করে দেয়, যেন তারা ব্রেকিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকেন।
পার্কিং চিহ্ন: কোথায় থামা যাবে, কোথায় নয়রাস্তায় আঁকা পার্কিং চিহ্ন বা ‘No Parking’ চিহ্ন চালকদের জানিয়ে দেয় কোথায় গাড়ি রাখা যাবে আর কোথায় রাখা যাবে না। সঠিক জায়গায় পার্ক না করলে শুধু জরিমানা নয়, ট্র্যাফিক জ্যামের কারণও হতে পারে।
চিহ্ন শুধু নিয়ম নয়, রক্ষাকবচওএই ছোট ছোট চিহ্নগুলোকে আমরা যতই অবহেলা করি না কেন, প্রতিটিই জীবনের সুরক্ষার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। রাস্তায় সঠিক তথ্য না থাকলে যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, বাড়ে দুর্ঘটনা। এ কারণে এগুলোকে শুধু ‘চিহ্ন’ নয়, বরং ‘রক্ষাকবচ’ বলাই শ্রেয়।
জেএস/এমএস