ইউনুস (আ.) আল্লাহ তাআলার একজন সম্মানিত নবি যাকে আল্লাহ তাআলা মুসেলের একটি জনপদ নায়নুয়ার অধিবাসীদের হেদায়াতের জন্যে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ওপর ঈমানের দাওয়াত দেন। উত্তম ও ভালো কাজের দাওয়াত দেন।
Advertisement
কিন্তু দীর্ঘ দিন দাওয়াত দেওয়ার পরও ওই এলাকার মানুষ আল্লাহর ওপর ঈমান আনেনি। এক পর্যায়ে ইউনুস (আ.) তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হন এবং তাদেরকে আল্লাহর আজাবের ভয় দেখিয়ে আল্লাহর নির্দেশ ছাড়াই ওই এলাকা ত্যাগ করেন।
আল্লাহর প্রেরিত নবি হিসেবে তার কর্তব্য ছিল আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশের অপেক্ষা করা। আল্লাহর নির্দেশ বা অনুমতি ছাড়া ওই এলাকা ত্যাগ করার কারণে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
তিনি ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পথে একটি নৌকায় ওঠেন। নৌকাটি মাঝ সমুদ্রে গিয়ে থেমে যায়। লোকেরা যে কোনোভাবে বুঝতে পারে বিশেষ কোনো ব্যক্তির কারণে এটা আটকে গেছে। তখন তারা লটারি করে এবং তাতে ইউনুসের (আ.) নাম ওঠে। ইউনুস (আ.) ওই নৌকা থেকে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়েন এবং একটি বড় মাছ তাকে গিলে ফেলে।
Advertisement
আল্লাহর তাআলার ইচ্ছায় ও দয়ায় ওই মাছের পেটে তিনি জীবিত থাকেন এবং নিজের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন,
لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَكَ اِنِّیۡ كُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ-জ্জালিমীন
অর্থ: আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র, মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম জালিম।
Advertisement
তার দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয় এবং আল্লাহ তাকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দেন।
পবিত্র কোরআনে সাফফাতে ইউনুসের (আ.) বিপদে পড়া ও বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর ইউনুসও ছিল পয়গম্বরগণের একজন। যখন পালিয়ে সে বোঝাই নৌকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। অতঃপর লটারি করালে সে দোষী সাব্যস্ত হল। অতঃপর একটি মাছ তাকে গিলে ফেলল, তখন সে অপরাধী গণ্য হয়েছিল। যদি সে আল্লাহর তসবীহ পাঠ না করত, তবে তাকে কেয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত। অতঃপর আমি তাকে এক বিস্তীর্ণ বিজন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম, তখন সে ছিল রুগ্ন। আমি তার ওপর এক লতাবিশিষ্ট বৃক্ষ উদগত করলাম। তাকে আমি লক্ষ বা ততোধিক লোকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। এবং তারা ঈমান এনেছিল; ফলে আমি তাদেরকে কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিলাম। (সুরা সাফফাত: ১৩৯-১৪৮)
সুরা ইউনুসে তার সম্প্রদায়ের লোকদের তওবা কবুল করার ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, এমন কোনো জনপদের দৃষ্টান্ত আছে কি যে তারা (শাস্তি দেখার পর) ইমান আনল আর তাদের ইমান উপকারে আসল- একমাত্র ইউনুসের সম্প্রদায় ছাড়া? তারা যখন ইমান আনল, তখন আমি দুনিয়ার জীবনে তাদের থেকে অপমানজনক শাস্তি দূর করে দিলাম, আর একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তাদেরকে জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিলাম। (সুরা ইউনুস: ৯৮)
সুরা আম্বিয়ায় তার দোয়া এবং তাকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, স্মরণ করো যুন-নূনের (ইউনুস আ.) কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম জালিম’। আমি তখন তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি। (সুরা আম্বিয়া: ৮৭, ৮৮)
এই দোয়াটি যেমন নবি ইউনুসের (আ.) জন্য উপকারী হয়েছিল, তার ক্ষমা ও মুক্তির কারণ হয়েছিল, সব মুমিনদের জন্যই দোয়াটি উপকারী। এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা সব মুমিনদেরই তাদের গুনাহ, বিপদ-আপদ ও দুঃখ-দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে পারেন। যেমন উল্লিখিত আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এভাবেই আমি মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি’।
ওএফএফ/এমএস