সাহিত্য

দুঃখমুখর রাত এবং অন্যান্য

দুঃখমুখর রাত এবং অন্যান্য

দুঃখমুখর রাত

Advertisement

নির্জন আকাশে চাঁদ যেন একা জাহাজ, তারার দল নিঃশব্দ নাবিক, মুখে নেই বাতাস। ঘুমিয়ে পড়া গলির মোড়ে নিভে গেছে আলো, হৃদয়ের জানালায় কাঁপে স্মৃতির পালও।

বাতাসে কান্নার ধ্বনি, ভাঙা বেহালার সুর, রাত যেন আঁধারে ঢাকা এক অজানা গুরুর। ঘুম আসে না চোখে, বালিশে স্বপ্নের জ্বালা, চোখের কোণে রাত্রির ছায়া খেলে যাওয়া কাব্যশালা।

জোনাকির ঝিলিক—ভাঙা প্রতিশ্রুতির মতো, সময়ের নদীতে ভেসে চলে ব্যথার জাহাজ। ঘরের কোণে প্রিয় কণ্ঠের মৃত স্মৃতি বাজে, স্মরণে চঞ্চল হয়ে উঠি, জেগে থাকি সাজে।

Advertisement

এই দুঃখমুখর রাতে, আমি এক ক্লান্ত কবি— শব্দের শরীরে গেঁথে রাখি হৃদয়ের ছায়াবৃত ছবি।

****

চন্দ্রমল্লিকা

নীরব রাতের কোণে আলো-আঁধারির পাশে, তুমি ফুটে ওঠো চন্দ্রমল্লিকা—শীতল সৌরভে ভেজাও সময়ের গহীনতা।

Advertisement

তোমার পাঁপড়িগুলো যেন গোপন কথার ভাষ্য,যার প্রতিটি কুঁড়ি জন্ম দেয় অনন্ত ভাবনায়— কে তুমি? কেন এত নিঃশব্দ অথচ দীপ্তিময়?

জোছনার মতো ধীর, অথচ দৃঢ় তোমার অস্তিত্ব, আকাশ চায়, মাটি ধরে রাখে, তুমি মাঝখানে—দুটি বিপরীতের সেতুবন্ধন।

আমার মনও আজ চায় হতে তোমার মতো, ফুল হয়ে থাকা নয় বরং অর্থ হয়ে ওঠা— যে অর্থ হারিয়ে যায় কথার অতলে।

চন্দ্রমল্লিকা, তুমি কি জানো? প্রতি শীতে তুমি শুধু ফোটো না, তুমি জাগিয়ে তোলো নিঃশব্দ বেদনার জ্যোৎস্না।

****

পুনর্জন্মের প্রতীক্ষা

যদি আবার ফিরি— এই ধুলোবালির পৃথিবীতে, তবে কি চিনে নেবে আমায় একফোঁটা বৃষ্টির শব্দে?

জন্ম যদি হয় গোধূলি আলোয়, চোখ খুলেই দেখি— এক ভাঙা সেতু, যার ওপারে তুমি দাঁড়িয়ে।

নতুন চামড়া, নতুন নাম, তবু কি হৃদয়ের ভাষা একই থেকে যাবে? এক চেনা অশ্রু, এক পুরোনো অভিমান?

এই জন্মে যে কথা বলা হয়নি, সেইসব শব্দ আকাশে কি জমা থাকে? নাকি হারিয়ে যায় মৌনতার মহাকাশে?

আমি তাই অপেক্ষা করি— একটি পাতাঝরা সকালে, যখন বাতাসে তোমার হাসি ভেসে আসবে অচেনা কারও ঠোঁটে।

আমার পুনর্জন্ম যদি হয়, তবে সে হবে অপেক্ষার ঠিকানা, যেখানে আমি আর তুমি নতুন হয়ে পুরোনো হয়ে উঠবো।

****

অলস বারান্দা

এই বারান্দাটা চুপ করে বসে থাকেবেলা গড়িয়ে যায়— কেউ জিজ্ঞেস করে না তার মন ভালো কি না।

একসময় এখানে দাঁড়িয়ে থাকতো দু’জনে, চায়ের কাপ, ভেজা আলো, আর কিছু না বলার সহজ সমঝোতা।

এখন শুধু বাতাস আসে— কোনো পুরোনো চুলের ঘ্রাণ বয়ে আনে, কিংবা হঠাৎ একটা ছেঁড়া কাগজ উড়ে যায় যার ওপর লেখা ছিল—‘ফিরে এসো।’

বারান্দা জানে—সময় বড় আত্মকেন্দ্রিক, সে কারও অপেক্ষা করে না, শুধু দেওয়ালে আরও কিছু শ্যাওলা জমে।

পাশের বাড়ির ছেলেটা হঠাৎ একদিন গান গেয়ে ওঠে, আর মনে হয়— কোনো কিছু এখনও শেষ হয়ে যায়নি।

এই অলস বারান্দা একটা আত্মজীবনী হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে, যেখানে প্রতিটি ইটের ফাঁকে আটকে আছে অগণিত ‘যদি’, ‘হয়তো’, আর ‘তবুও’।

এসইউ/এমএস