খেলাধুলা

ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে ভালো দল হয়ে উঠছে বাংলাদেশ?

ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে ভালো দল হয়ে উঠছে বাংলাদেশ?

একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশকে বলা হতো ওয়ানডে টিম। কারণ ক্রিকেটের ৩ ফরম্যাটের ঐ একটিতেই টাইগাররা মোটামুটি ভালো খেলতো। নিয়মিত বলে-কয়ে না পারলেও মাঝেমধ্যেই জিততো এবং কিছুদিন পরপর বড় শক্তিগুলোকেও হারাতো। সে কারণে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির চেয়ে টাইগারদের ৫০ ওভারের ফরম্যাটে সাফল্য বেশি, জয়ও বেশি।

Advertisement

ওয়ানডের ওই সাফল্যর বিপরীতে ২০ ওভারের ফরম্যাটের ব্যর্থতা নিয়েও অনেক সমালোচনা হয়েছে। বার বার বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ওয়ানডেটা মোটামুটি পারে; কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে কিছুই পারে না। শুধু হারে।

সময়ের প্রবাহমানতায় সে চিত্র ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে। ২০২৩ সাল থেকেই ধীরে ধীরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জয়ের সংখ্যা বাড়ছে টাইগারদের। প্রতিপক্ষ যেই হোক, তাদের শক্তি-সামর্থ্য আর অভিজ্ঞতা যেমনই থাকুক না কেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ওয়ানডের (৯ ম্যাচে জয় মাত্র ৩টি) চেয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে (২৪ ম্যাচে জয় ১২টি) জয় অনেক বেশি।

এ বছর এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড আর ভারতের বিপক্ষে মিলে পাঁচ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি। সেখানে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এরই মধ্যে ৯ খেলার ৩টিতে জিতলো টাইগাররা।

Advertisement

সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবটা সত্য বলে প্রমাণ হলো এবার শ্রীলঙ্কা সফরেও। যেখানে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে টাইগাররা হেরেছে ১-০ তে। তারপর ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মিরাজের দল পরাজিত ১-২ এ। আর সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজটা ২-১ এ জিতে নিজেদের করে নিলো লিটন বাহিনী।

হঠাৎ কীভাবে ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে সাফল্য তুলনামূলক বেশি পাচ্ছে টাইগাররা? তবে কি ওয়ানডের তুলনায় এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা ভালমত রপ্ত করে ফেলেছেন? ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিটা বেশি ভাল খেলতে শিখেছেন তারা?

দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের খুব কাছ থেকে দেখেন, জানেন, বোঝেন এমন মানুষ নাজমুল আবেদিন ফাহিম দিয়েছেন এ প্রশ্নের উত্তর। শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে লিটন দাসের দল সিরিজ বিজয়ের পর জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে ফাহিম বোঝানোর চেষ্টা করেন, একটি বিশেষ কারণে বাংলাদেশ এখন ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে সাফল্য বেশি পাচ্ছে।

কী সেই কারণ?

Advertisement

বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধানের ব্যাখ্যা, একটা কারণ হতে পারে যে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটার আকার, আয়তন খুব ছোট। মাত্র ২০ ওভারের খেলা। এখানে কয়েকজন ব্যাটর একটু বেশি ভালো খেললে জেতা যায়। যেটা ৫০ ওভারে সম্ভব না। ওয়ানডেতে ব্যাটিং গভীরতা বেশি লাগে। আপনার ওপরে, মাঝখানে ও শেষের দিকে বা নিচের দিকেও খুব ভালো ব্যাটারের দরকার হয়।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় সেই জায়গায়টায় আমরা ওয়ানডেতে পিছিয়ে পড়েছি। কারণ, আমাদের ওয়ানডে দল মানেই ছিল তামিম, মুশফিক, সাকিব ও রিয়াদের মতো পরিণত, প্রতিষ্ঠিত, অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যাটার। যারা পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে, বুঝে ব্যাট করতে পারতো এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও তাদের অনেক বেশি ছিল। সে কারণেই তাদের সময়ে আমরা ওয়ানডেতে বেশি ম্যাচ জিতেছি। তুলনামূলক ভালোও খেলেছি।

বিসিবির এই পরিচালক জানান, আমার মনে হয়, এখন ওয়ানডেতে আমাদের ব্যাটিংয়ে আগের সেই গভীরতাটা নেই। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে যদি আমরা দেখি ওপরের দিক থেকে, বিশেষ করে প্রথম তিনজনের মধ্যে একজনও অন্তত টিকে যায়, তাহলে আমরা ভালো খেলতে পারি এবং খেলিও। আমার মনে হয় সেটাই মূলত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমাদের সাফল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

দুই তরুণ ওপেনার তানজিদ তামিম আর পারভেজ ইমন এবং অধিনায়ক লিটন দাস- এই তিনজনের অন্তত ২ জন প্রায়ই ভালো খেলছেন বলে উল্লেখ করেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম। তিনি বলেন, তারা রান করছে। তাতেই দল জয়ের বন্দরে পৌঁছে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, লিটন দাসের পারফরম্যান্সটাও এ সিরিজে বেশ ভালো ছিল। ৩ নম্বরে কেউ একজন এমন খেললে তার সঙ্গে যদি আর একজন ওপেনার ভালো খেলে, একটা বড় জুটি তৈরি করেন, তখন রান ওঠার গতি ভালো থাকে। দল একটা ভালো ছন্দ খুঁজে পায়। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ এখন সেটাই পেতে শুরু করেছে।

কোচ ও বোর্ড কর্মকর্তা ফাহিমের ব্যাখ্যার পক্ষে কথা বলছে পরিসংখ্যান। প্রথম ম্যাচে ২ ওপেনার তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন ও অধিনায়ক লিটন দাস ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ ২ ম্যাচে ওপরের দিকে লিটন দাস (দ্বিতীয় ম্যাচে ৫০ বলে ৭৬) ও শেষ ম্যাচে বুধবার তানজিদ তামিম (৪৭ বলে ৭৩ নট আউট) ভালো খেলে জয়ের ভিত রচনা করে দিয়েছেন।

এআরবি/আইএইচএস/এএমএ