কয়েক মাসের দর কষাকষির পর অবশেষে বুধবার (৩০ এপ্রিল) বহুল আলোচিত খনিজ চুক্তিতে সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
Advertisement
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তির করছিলেন। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে তার সঙ্গে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকে তীব্র বাদানুবাদের পর পরিস্থিতি তিক্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন রাজস্ব দপ্তর বুধবার ঘোষণা করেছে, উভয় দেশ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছে। অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই নিষ্ঠুর এবং অযৌক্তিক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর জন্য সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
তিনি আরও বলেন, এই চুক্তি রাশিয়াকে স্পষ্ট সংকেত দেয়, ট্রাম্প প্রশাসন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং সমৃদ্ধ ইউক্রেনের ওপর দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইউক্রেনের অর্থনৈতিক মন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিদেঙ্কো এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে ওয়াশিংটনে উপস্থিত ছিলেন।
কী আছে চুক্তিতেইউক্রেনের অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বা সামরিক সহায়তার মাধ্যমে এই তহবিলে অর্থ দেবে এবং ইউক্রেন খনিজ সম্পদের আয় থেকে ৫০ শতাংশ তহবিলে প্রদান করবে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ১০ বছর এই তহবিলের সব অর্থই ইউক্রেনে বিনিয়োগ হবে; এরপর লাভ অংশীদারদের মধ্যে ভাগ হবে।
তহবিল পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন সমানভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং এই চুক্তির আওতায় শুধু ভবিষ্যতের সামরিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
Advertisement
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিদেঙ্কো বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা শুধু বিনিয়োগই নয়, বরং একটি কৌশলগত অংশীদারও লাভ করেছি।
আরও পড়ুন>>
ইউক্রেনে দখল করা ভূমির খনিজ যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে প্রস্তুত রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ চুক্তি করতে প্রস্তুত ইউক্রেন: জেলেনস্কি ট্রাম্পের ইচ্ছা পূরণ/ ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে ভাগ পাবে যুক্তরাষ্ট্র, চুক্তি সইচুক্তির শর্তাবলীর মধ্যে অন্যতম হলো, খনিজের ‘সম্পূর্ণ মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ’ ইউক্রেনের কাছে থাকবে।
ইউলিয়া স্ভিরিদেঙ্কো বলেন, আমাদের ভূখণ্ড ও জলসীমার সব সম্পদ ইউক্রেনের মালিকানাধীন। ইউক্রেনই নির্ধারণ করবে কী এবং কোথায় উত্তোলন করা হবে। ভূগর্ভস্থ সম্পদ ইউক্রেনের মালিকানাধীন থাকবে — এটি চুক্তিতে স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত।
নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে অনিশ্চয়তাযুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের মধ্যকার খনিজ চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টির উল্লেখ রয়েছে কি না তাও স্পষ্ট নয়।
তবে ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, ইউক্রেন প্রথমে চুক্তি করুক এবং পরে গ্যারান্টি নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ এবং মার্কিন কোম্পানির ইউক্রেনে উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি আগ্রহী করবে।
সহায়তার প্রতিদান দিতে হবে নাট্রাম্প ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সহায়তার ‘প্রতিদান’ হিসেবে চুক্তিটিকে তুলে ধরেছিলেন। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর বিনিময়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ দাবি করেছিলেন ট্রাম্প।
তবে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শমিহাল বলেছেন, খনিজ চুক্তির আওতায় ইউক্রেনকে আগে পাওয়া সহায়তার কোনো প্রতিদান বা অর্থ ফেরত দিতে হবে না।
তিনি বলেছেন, তহবিলের লাভ একচেটিয়াভাবে ইউক্রেনে পুনঃবিনিয়োগ করা হবে।
সূত্র: এএফপি, ফ্রান্স২৪কেএএ/