রাজশাহীতে কোরবানির গরু বিক্রি হচ্ছে কেজিদরে। একটি গরু ওজন করার পর সেটির দাম নির্ধারণ করে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি অনলাইনে বিক্রি ও বুকিং নেওয়া হচ্ছে। খামারিরা বলছেন, এতে সাড়াও মিলছে ভালো। কোনো কোনো খামারি এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ গরু অনলাইনে বিক্রি করেছেন।
Advertisement
যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, করোনার পর তাদের নিজস্ব অনলাইনে তেমন সাড়া নেই। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে সাড়া মিলছে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি। এর বিপরীতে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি পশু মজুত রয়েছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি পশু বেশি। অতিরিক্ত পশু বিক্রির জন্য নেওয়া হবে দেশের অন্য জেলায়। এবার জেলায় কোরবানিযোগ্য গরু ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৪২টি, মহিষ ৪ হাজার ২৪০, ছাগল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৩ ও ভেড়া ৩০ হাজার ১৪৮টি।
আরও পড়ুন ‘বাদশা’র ওজন ৩৫ মণ, কিনতে লাগবে ১৫ লাখ টাকা সিরাজগঞ্জে গরু চুরির হিড়িক, বাদ যাচ্ছে না কোনো রাত!রাজশাহীতে ওজনে গরু বিক্রি করছে ‘নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্ম’। ফার্মটিতে কোরবানি কেন্দ্র করে ষাঁড় গরু প্রতিপালন করা হয়। এ বছর কোরবানির উপযোগী ১০০টি ষাঁড় রয়েছে ফার্মটিতে। কয়েকটি জাতের ষাঁড়ের মধ্যে পাহাড়ি গয়ালও (গরু) রয়েছে। এই গয়াল অনলাইনে বিক্রি ও বুকিং নেওয়া হচ্ছে।
Advertisement
সাড়া অনেক পাচ্ছি। আশা করছি ঈদের আগেই সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে। আমাদের ক্রেতা বেশি রাজশাহীর। এর পাশপাশি ঢাকা-চট্টগ্রামেও বিক্রি করবো। অনলাইনে বা অফলাইনে কেউ কিনলে আমদের নিজস্ব গাড়িতে পৌঁছে যাবে। এজন্য ঢাকায় ৫ হাজার টাকা ও চট্টগ্রামে ৭ হাজার টাকা চার্জ দিতে হবে। রাজশাহীতে লাগবে ৬০০ টাকা।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ফার্ম থেকে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফার্মে শাহিওয়াল, পাবান ব্রিড, দেশি, রেড চিটাগাং জাতের ষাঁড় এ বছর কোরবানির জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। একেকটি গরুর ওজন ২৭৫ থেকে ৫৭৫ কেজি বা তারও উপরে।
গরু অনলাইনে বিক্রি ও বুকিং নেওয়া হচ্ছে-ছবি জাগো নিউজ
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাহেন্দ্রায় অবস্থিত নাবা ডেইরি ও ক্যাটল ফার্মে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২১ বিঘা জমির ওপর এ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে ষাঁড়, গাভি, বকনা বাছুর লালন-পালন করা হচ্ছে।
Advertisement
ফার্মটিতে লাইভে গরুর দাম নির্ধারণ করা হয়। ২৭৫ থেকে ৪৫০ কেজি ওজনের গুরু বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ টাকা কেজিদরে। এছাড়াও ৫৫০ থেকে উপরের জাতের গুরু বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজিদরে। ফলে এবার গুরুর দাম পড়েছে দেড় লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত।
এখানে সবগুলো হলো আমাদের দেশি ব্রিড। এর মধ্যে পিওর লোকাল, শাহিওয়াল, পাবনা ব্রিড ও রেড চিটাগাং আছে। গরুগুলো বিশেষভাবে মোটাতাজাকরণ করা হয়। এখানে ভুট্টা ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানো হয়। এগুলো শতভাগ নিরাপদ। মোটাতাজাকরণে অবৈধ কিছু দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি গরুর যে ভ্যাকসিন সেগুলো আমরা দিয়ে থাকি।
নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ডা. সারওয়ার জাহান জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমাদের এই ফার্মে প্রায় ১০০টি গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এখানে সবগুলো হলো আমাদের দেশি ব্রিড। এরমধ্যে পিওর লোকাল, শাহিওয়াল, পাবনা ব্রিড ও রেড চিটাগাং আছে। গরুগুলো বিশেষভাবে মোটাতাজাকরণ করা হয়। এখানে ভুট্টা ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানো হয়। এগুলো শতভাগ নিরাপদ। মোটাতাজাকরণে অবৈধ কিছু দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি গরুর যে ভ্যাকসিনগুলো আছে সেগুলো আমরা দিয়ে থাকি।
বিক্রির জন্য গরুর ওজন মাপা হচ্ছে-ছবি জাগো নিউজ
তিনি বলেন, আমাদের এখানে দেখে ও অনলাইনে কিনতে পারবেন। এগুলো বিভিন্নভাবে লাইভে বিক্রি করা হয়। কোনো গরু ১০০ কেজি হলে সেটির মাংস ৫৮ থেকে ৬০ কেজি পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন বিশালাকৃতির ৩ ষাঁড়, একসঙ্গে কিনলে ওমরাহ ফ্রি দুধ দিচ্ছে পাঁঠা, দেখতে মানুষের ভিড়নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মের উপ-মহাব্যবস্থাপক মাছুমুল হক বলেন, রাজশাহীতে প্রথম আমাদের ফার্মেই শুধু লাইভে গরু বিক্রি করা হয়। ২০২০ সাল থেকেই আমরা ওজনে বিক্রি করি। এতে ক্রেতারা পরিকল্পনামাফিক গরু কিনতে পারেন। ফলে ক্রেতার লোকসান হয় না। আমাদের পুরোনো ক্রেতারাই এবার বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। নতুন ক্রেতাও আসছে। এরই মধ্যে আমাদের ৪০ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সাড়া অনেক পাচ্ছি। আশা করছি ঈদের আগেই সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে। আমাদের ক্রেতা বেশি রাজশাহীর। এর পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রামেও বিক্রি করবো। অনলাইনে বা অফলাইনে কেউ কিনলে আমদের নিজস্ব গাড়িতে পৌঁছে যাবে। এজন্য ঢাকায় ৫ হাজার টাকা ও চট্টগ্রামে ৭ হাজার টাকা চার্জ দিতে হবে। রাজশাহীতে লাগবে ৬০০ টাকা।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান বলেন, রাজশাহীতে করোনাকালে প্রাণিসম্পদের নিজস্ব পশুর অনলাইন হাট চালু হয়। সেটি এখনো আছে। এবার তেমন সাড়া নেই। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে যে সব খামারিরা বেশি করে গরু পালন করেন তারা অনলাইনে বিক্রি করছেন। এগুলো মূলত তারা অনলাইনে বা কেজিদরে বিক্রি করছেন। এগুলোতেও ভালো সাড়া পাচ্ছি।
এসএইচএস/এমএফএ/এএসএম