ছাত্রদল নেতা আজিজুল হাকিমসহ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখার ৩৫ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
Advertisement
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার কোতয়ালি থানায় এ মামলা হয়। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) মামলার বাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আজিজুল হাকিম জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগকর্মী ও জবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন জুলকারনাইন (২৬), শাহরুক আলম শোভন (২৮), জাহিদুল ইসলাম হাসান (২৫), মাকসুদুল হাসান আরাফাত (২৫), অভি ইসলাম (৩০), কামরুল ইসলাম (৩০), কামরুল ইসলাম (৩১), অতনু গুণ্ডা (৩০), তৌফিক এলাহী (৩০), মো. রিজভি খান (২৯), ফরহাদ মোল্লা (২৯), রায়হান (৩০), আল সাদিক হৃদয় (৩০), ইমরুল নিয়াজ (৩০) ও মো. সম্রাট হোসেন (২৯)।
আসামিদের মধ্যে আরও আছেন- ছাত্রলীগকর্মী সামিউল তাহসান শিশির (৩০), মির মুকিত (২৫), অপূর্ব লাবিব (২৪), মারুফ (২৮), মাহিনুর রহমান বিজয় (২৭), সাজবুল ইসলাম (২৭), অর্জুন বিশ্বাস (২৪), রবিউল ইসলাম (২৭), মিলন মাহফুজ (২৮), মেহেদী হাসান শাওন (৩০), আবু সুফিয়ান (২৭), সাইফ (২৭), সজল (২৯), রিফাত সাঈদ (২৭), অভিজিৎ বিশ্বাস (২৭), আব্দুল কাদের (২৭), রাজা হাওলাদার (১২), মাহবুব নয়ন (৩০), শরিফুল ইসলাম তানভির (২৯) ও আসাদুজ্জামান আসাদ (২৯)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
Advertisement
মামলার এজাহার বলা হয়, আসামিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন ধরনের গ্যাং ছিল। এদের মধ্যে উৎপাত ১২ নামের গ্যাংয়ের নেতৃত্বে ছিল ১ নম্বর আসামি আকরাম হোসেন জুলকারনাইন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে শহীদ সাজিদ ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে টর্চার সেলের মাধ্যমে ছাত্রদল এবং ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্রদের ধরে নিয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতন, মোবাইল মানিব্যাগ ছিনতাইসহ সবাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যাপক মারধর করা হতো। তারই ধারাবাহিকতায় ১ নম্বর আসামি আকরাম হোসেন জুলকারনাইন ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রড, লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে বাদীকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুতর জখম করেন। এর আগে আসামি আকরামকে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়ার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বয়কট করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের গেটে তালা দেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২টার দিকে কোতয়ালি থানায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষরের মুচলেকা দিয়ে আরমানকে ছাড়িয়ে নেন।
মামলার প্রসঙ্গে বাদী আজিজুল হাকিম বলেন, অতীতে অনেক মানুষই স্রোতে গা ভাসিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ করেছে। সবাইকে হয়রানি করা হবে না। শুধু যেসব অত্যাচারী ছাত্রলীগ আমার মতো রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন করেছে, তাদের বিচার চাই।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা ক্যাম্পাসে ছাত্রদল করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা শুরু হয়েছে। যাদের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা টর্চার সেলে আটকে নির্যাতন করে খুন-জখম করেছে, তার প্রতিটা ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। তবে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন আসামি না হন সে বিষয়ে সংগঠন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একসময় ছাত্রলীগ করে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, কিন্তু পরে ছাত্রলীগ ছেড়ে দিয়েছে এমন অনেকেই আছে। কিন্তু ছাত্রলীগ ছাড়ার মাধ্যমে তো আর তাদের পূর্বের পাপ মুছে যাবে না। যারা নির্যাতনকারী ছিল, তাদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ক্যাম্পাসে আর কখনো নির্যাতনের সংস্কৃতি ফিরে না আসে।
Advertisement
ডিএমপির কোতয়ালি জোনের উপ-কমিশনার (এসি) ফজলুল হক বলেন, রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুইজনকে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রক্টরিয়াল বডি হস্তান্তর করে। তাদের মধ্যে আকরাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সক্রিয় ভূমিকায় ছিল। ছাত্রলীগের সাথে বা কোনো পদেও তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০০ জন তাকে ছাড়াতে আসে। উপাচার্য ও প্রক্টরের রেফারেন্স দিয়ে তাদের তিনজন শিক্ষকসহ ৫১ জন গণস্বাক্ষরের মুচলেকা দিয়ে আকরামকে নিয়ে যান।
মামলার বিষয়ে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ২০২৩ সালে ছাত্রদলের ওপর হামলার অভিযোগে একটা মামলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআইএন/বিএ/এমএস