অর্থনীতি

খারাপ সময়েও রাজস্ব গ্রোথ ভালো, এপ্রিলে আরও ভালো হবে

খারাপ সময়েও রাজস্ব গ্রোথ ভালো, এপ্রিলে আরও ভালো হবে

অর্থনীতির খারাপ সময়ের মধ্যেও রাজস্ব আদায় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

Advertisement

তিনি বলেছেন, এত খারাপের মধ্যে রাজস্ব গ্রোথ ভালো আছে। এপ্রিলে আরও ভালোর দিকে যাবে।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ‘সামষ্টিক অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজস্ব ব্যবস্থা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন আইএমএফের কিস্তির ২৩৯ কোটি ডলার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ২০২৩ সালে কর ফাঁকি ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকার

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর রিয়াজ।

Advertisement

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ অনেক কম। যেটা সভ্য দেশের লক্ষ্য নয়। আমাদের সভ্য হতে হলে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে। দেশকে বিনিয়োগবান্ধব করতে করের হার অনেক কমিয়েছি। সবার কাছ থেকে যেহেতু কর আদায় করতে পারি না, আবার কর ফাঁকিও যেহেতু হয়, তাই যখনই কোনো পদক্ষেপ নিতে চাই কমপ্লায়েন্ট করদাতারা তখন অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, যারা কর দেয় না তাদের আমরা নোটিশ করছি। কর আদায়ে ডিজিটাইলেজশন করছি৷ আগামী বছর থেকে করপোরেট কর অনলাইনে আদায় করবো।

অটোমেশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্ডের ক্ষেত্রে পুরোপুরি অটোমেশন করতে পেরেছি৷ সেন্ট্রাল বন্ডেড হাউজে নানান সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সিঙ্গেল উইন্ডোতে অটোমেশন করছি। এগুলো হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে।

আরও পড়ুন

Advertisement

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না, সুবিধা হারাতে পারে বড় রপ্তানি খাত

‘ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রতিনিয়ত কর কমানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আমাদের কর আদায় বাড়াতে হবে’- যোগ করেন তিনি।

আগামী বাজেট প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটে একটা সিগন্যাল পাবেন। আমরা একটু সহনীয় করার চেষ্টা করছি। কিছু ক্ষেত্রে কঠিন পদক্ষেপ নেবো।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এখন থেকে প্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো হবে। আমাদের ১ কোটি ১৫ লাখের মতো টিআইএনধারী আছেন। তাদের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ৪০ লাখ। বাকি প্রায় ৭৬ লাখ কিন্তু রিটার্ন দেন না। এখন যেসব টিআইএনধারী ট্যাক্স দেন না তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে।

‘দেশের অর্থনীতির জন্য সরকারি তহবিল থেকে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা দরকার সে তুলনায় রাজস্ব আদায় না হওয়ার কারণে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয় না। আগেও আমাদের সেই পরিমাণ পুঁজি ছিল না। আমাদের রাজস্ব এতো কম আর ব্যয় এতো বেশি যে বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে দেশে অর্থায়ন করতে হয়েছে’- যোগ করেন তিনি। এসময় কর আহরণ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাইলাইজেন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে মাশরুর রিয়াজ বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে যে কথা উঠছে তার চেয়ে জরুরি হচ্ছে সব শিল্পে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এর উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছেন কি না তার ওপর নির্ভর করছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি।

তিনি গত এক সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ইতিহাসে সবচেয়ে কম উল্লেখ করে বলেন, প্রবৃদ্ধির ফ্যাসিনেশন থেকে আমাদের আপাতত একটু ছুটি নিতে হবে। ১৯৯১ সালের পর গড় প্রবৃদ্ধি যেখানে ৫ শতাংশের ওপরে, সেখানে বিশ্বব্যাংকের ৩ দশমিক ৩ এবং আইএমএফের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস খুব সুখকর নয়।

ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে সেমিনারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বাংলাদেশের করনীতি এবং এর বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) নির্বাহী পরিচালক নুরুল কবীর।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ করদাতার সংখ্যা কম হওয়ায় যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করছেন তাদের ওপরই চাপ বাড়ানো হয়। তাই প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ রাখেন তিনি।

এসএম/এমকেআর/এএসএম