কথায় বলে ‘একই অঙ্গে এত রূপ!’ আজ মঙ্গলবার মোহামেডান-আবাহনীর মধ্যকার অলিখিত ফাইনাল ম্যাচটিও ছিল তাই। মোহামেডানের এক ইনিংসেরই যেন নানা রূপ, অনেক ওঠা নামার পালা।
Advertisement
এক সময় মনে হচ্ছিল, মোহামেডান ব্যাটাররা রানের নহর বইয়ে দেবেন। সাদা-কালোরা বড়সড় স্কোর গড়বেন। পরক্ষণেই বদলে গেল চালচিত্র। অনেক ওঠা নামার পালা শেষে মোহামেডান ৫০ ওভারে করেছে ৭ উইকেটে ২৪০ রান।
সাদা-কালোদের এই স্কোরটা আড়াই শ'র নিচে না, তিনশর আশপাশে থাকতে পারতো। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৬২ বলে ৫২) আর আরিফুল ইসলামের (৫৭ বলে ৫০) ফিফটির আগে ওপেনার রনি তালুকদার (৪৭ বলে ৪৫) ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ফরহাদ হোসেন (৫৬ বলে ৪২) দুটি কার্যকর ইনিংস খেলেও অসময়ে আউট হওয়ায় রানের গতি কমে যায় মোহামেডানের।
আবাহনী পেসার রিপন মণ্ডলের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে রনি তালুকদার তিন বাউন্ডারিতে তুলে নেন ১৫ রান। পাওয়ার প্লের প্রথম ১০ ওভারে মোহামেডানের রান ছিল ১ উইকেটে ৫৬। দেখে মনে হয়েছে, চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে বড় স্কোর গড়তে যাচ্ছে মোহামেডান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এরপর যত সময় গড়ালো, আবাহনীর স্পিনাররা রানের লাগাম টেনে ধরলেন লাগলেন।
Advertisement
ইনিংসের ১২ ওভার পর্যন্ত দুই পেসার রিপন মণ্ডল ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী একসঙ্গে বোলিং করলেন। ১১.৫ ওভারে রিপন মণ্ডলের থ্রি কোয়ার্টার লেন্থের বলকে অযথা জায়গায় দাঁড়িয়ে পুল করতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রনি তালুকদার। তার আগে নারায়ণগঞ্জের এ ওপেনারের ব্যাট ছিল মোহামেডানের আস্থার প্রতিক।
রনি আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেল চালচিত্র। তখন মোহামেডানের রান ছিল ২ উইকেটে ৬৬। এরপর ১৩ থেকে ৩৭ ওভার পর্যন্ত এক টানা ২৫ ওভার করেছেন আবাহনীর চার স্পিনার- রাকিবুল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মাহফুজুর রাব্বি ও মেহরুব হাসান।
তারপর দু'প্রান্তেই স্পিন আক্রমণ শুরু করে আবাহনী। মোহামেডান ব্যাটারদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখেন তারা। আবাহনীর মাপা বোলিংয়ে সিঙ্গেল তুলতেও রীতিমতো কষ্ট হয় মোহামেডান মিডল অর্ডারের। তার প্রমাণ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুই অংকে পৌঁছাতে ২৭ বল লাগা। এ সময় আবাহনীর চার স্পিনার ২৫ ওভারে দেন মাত্র ৮৭, ওভারপিছু সাড়ে তিনেরও কম (৩.৪৮)।
৩৮তম ওভারে পেসার রিপন মণ্ডল আবার বোলিং করতে আসলে রানের গতি বাড়ে মোহামেডানের। স্পিনে দীর্ঘ সময় ধরে একদিক আগলে রাখার পাশাপাশি সিঙ্গেল নিয়ে খেলতে থাকা মাহমুদউল্লাহ আবাহনীর বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর এক ওভারে পরপর ২ ছক্কা হাঁকিয়ে পৌঁছে যান পঞ্চাশের দোরগোড়ায় (৪৯)।
Advertisement
অপর প্রান্তে মাহমুদউল্লাহকে কার্যকর সঙ্গ দেন আরিফুলও। তার আগে ফরহাদ হোসেন ৪২ রানের (৫৬ বলে) চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেন। কিন্তু কেউই লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল শেষ দিকে হাত খুলে রানচাকা সচল করলেও কেউই শেষ করে আসতে পারেননি।
শেষ দিকে হাত খুলে খেলা তো বহুদূরে; সাইফউদ্দিন, নাসুম আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানরা বল পিছু রানও তুলতে পারেননি।
৪৬তম ওভারে আবাহনী ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেককে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ লং অন বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিলে মোহামেডানের রান গতি আবার কমে যায়। অপর প্রান্তে সঙ্গী আরিফুলও হাত খুলে ৫৭ বলে হাফসেঞ্চুরি উপহার দিলেও শেষ বল পর্যন্ত উইকেটে থাকতে ব্যর্থ হন। ৪৮তম ওভারে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আরিফুল শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
এরপর শেষ ১৩ বলে ৪ উইকেট হাতে রেখেও মোহামেডান তোলে মাত্র ১২ রান। আর তাতেই সাদা-কালোদের স্কোর আড়াই শ'র নিচেই থাকে।
মোহামেডান ও আবাহনী ম্যাচের আকর্ষণ-উত্তেজনা অনেক কমে গেছে অনেকটা। কিন্তু ড্রেসিংরুমের মানসিক চাপটা ঠিকই আছে। এই স্নায়ুক্ষয়ী চাপে ২৪০ রান একদম কম নয়। তার ওপর এটা অলিখিত ফাইনাল। সঙ্গে উইকেটও স্লো। সব মিলে এই স্কোরটাও লড়িয়ে পুঁজি হতে পারে।
মোহামেডান লাইন-আপে স্পিনার কম, মাত্র ২ জন; নাসুম আহমেদ ও নাবিল সামাদ। দেখা যাক, বৈশাখের খরতাপে খটখটে উইকেটে তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে ২৪০ রানকে জয়সূচক পুঁজিতে পরিণত করতে পারে কি না মোহামেডান।
এআরবি/এমএইচ/
এমএইচ/এএসএম