গ্রামীণ অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হাঁস পালন। এর মধ্যে মাসকোভি হাঁস উল্লেখযোগ্য। যা ‘চীনা হাঁস’ নামেও পরিচিত। বর্তমানে এই হাঁস বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সহজ পালন পদ্ধতি, কম খরচে অধিক লাভ এবং পুষ্টিকর ডিম ও মাংসের কারণে এটি গ্রামীণ কৃষকদের কাছে আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠছে।
Advertisement
মূলত দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার প্রজাতি হলেও মাসকোভি হাঁস এখন এশিয়ার বহু দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পালন হচ্ছে। মাথায় লাল রঙের কারুনকেল থাকার কারণে এদের সহজেই শনাক্ত করা যায়। একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হাঁসের ওজন হয় প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ কেজি এবং মাদি হাঁসের ওজন আড়াই থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
মাসকোভি হাঁস খোলা পরিবেশে ঘুরে ঘুরে স্বাভাবিকভাবে খাবার সংগ্রহ করতে পারে। এরা ধানক্ষেত ও পতিত জমিতে পোকামাকড় খেয়ে জমিকে উপকৃত করে। এদের পালন করতে আলাদা খামার বা জটিল অবকাঠামোর প্রয়োজন হয় না। ঘরের আঙিনায় বা খোলা জায়গায় খুব সহজেই পালন করা সম্ভব।
এই প্রজাতির হাঁস নিউক্যাসেল ডিজিজ ও বার্ড ফ্লুর মতো রোগের প্রতি তুলনামূলকভাবে প্রতিরোধী হওয়ায় কৃষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও চিকিৎসা খরচ কমে আসে। খাদ্য হিসেবে তারা সহজলভ্য শাকপাতা, পোকামাকড় এবং ধান-ভাঙার ভূষি খেয়ে থাকতে পারে।
Advertisement
একটি মাসকোভি হাঁস বছরে গড়ে ৬০-১২০টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের ওজন প্রায় ৭৫-৮৫ গ্রাম, যা পুষ্টিগুণে সাধারণ হাঁসের ডিমের চেয়ে সমৃদ্ধ। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সময় লাগে প্রায় ৩৫ দিন। এরা স্বাভাবিকভাবে ডিমে তা দিয়ে অধিকাংশ ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম।
আরও পড়ুন
তিতির পালনে স্বাবলম্বী রাজবাড়ীর রুবেল কুড়িগ্রামে জনপ্রিয় হচ্ছে পেকিন জাতের হাঁস পালনমাসকোভি হাঁসের মল মাছের জন্য উপকারী খাদ্য হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। ফলে হাঁস ও মাছ একসঙ্গে চাষ করে কৃষকেরা দ্বিগুণ লাভবান হতে পারেন। যা একটি টেকসই চক্রাকারে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
গ্রামীণ নারীরা ঘরে বসেই এই হাঁস পালন করে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারেন। দেখা গেছে, যদি একজন খামারি ৫০টি হাঁস পালন করেন, তাহলে বছরে এক লাখ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব। এতে তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ে এবং জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে।
Advertisement
হাঁসের মল জৈব সার হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য, যা পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থায় অবদান রাখে এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন কমিয়ে দেয়। বর্তমানে বাজারে মাসকোভির উন্নত জাত যেমন- কিউবিয়ান হোয়াইট, হাইব্রিড মাসকোভি ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং বেশি ডিম ও মাংস দেয়। স্থানীয় বাজার ছাড়াও শহরাঞ্চলে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
কম খরচ, সহজ পদ্ধতি, পুষ্টিসমৃদ্ধ ডিম ও মাংস এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মাসকোভি হাঁস গ্রামীণ জীবিকার এক সম্ভাবনাময় দিক। পরিকল্পিত প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা পেলে এটি গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্যসূত্র ১. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২. খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ৩. বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট ৪. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
এসইউ/এমএস