দেশজুড়ে

প্রতিবাদ না করায় অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে অনশন

প্রতিবাদ না করায় অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে অনশন

নওগাঁয় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাফিউল ইসলাম রিফাত (২২) নামের এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে।

Advertisement

শনিবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রকাশ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালনসহ আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা।

হামলার অভিযোগ ওঠা ছাত্রদল নেতার নাম শাহরিয়ার শিশির। জেলা ছাত্রদলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন তিনি।

Advertisement

অন্যদিকে, আহত রিফাত নওগাঁ সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত হয়ে ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জুনায়েদ হোসেন, সাদনান সাকিব, রাজনসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ঘটনাস্থলে কলেজ অধ্যক্ষ সামসুল হক এবং শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বিদ্যুৎ উপস্থিত ছিলেন। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ছাত্রদল নেতা শিশির প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করতে হবে।

Advertisement

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, দুপুর ২টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ এবং শিক্ষক পরিষদের সম্পাদকের পদত্যাগের দাবিতে একটি মিছিল বের করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ের কাছে পৌঁছালে কর্মচারীরা ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে দেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনী এবং থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অধ্যক্ষ এবং শিক্ষক পরিষদ সম্পাদকের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাফিউল ইসলাম রিফাত নির্মাণাধীন একটি ভবনের পাথর এবং বালু রাখা নিয়ে ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখেন, ‌‘আমাদের নওগাঁর মানুষের হাঁটার জায়গায় কীভাবে তারা ইট-বালু-খোয়া ফেলে দিয়ে রাখছে, দেখেন কী করতেছে এইটা। এগুলো কি দেখতে পায় না আমাদের নওগাঁ জেলা প্রশাসক? এটা তো মানুষের হাঁটার জায়গা। এই জায়গায় কেন বালু ফেলে দিয়ে রাখবে?’

ওই পোস্টের পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে রিফাত কলেজে প্রবেশ করেন। এসময় আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন ছাত্রদলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার শিশিরসহ তার অনুসারীরা। এসময় তারা রিফাতকে ডেকে ভিডিওটির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা রিফাতকে লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত করেন।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সিয়াম শিথিল বলেন, ‘শিশির ছাত্রদলের রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিল না। সে সবসময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ লালের সঙ্গে চলাফেরা করতো। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সে ছাত্রদলের পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে।’

হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, শিশির এবং তার ১০ থেকে ১৫ জন পেটুয়া বাহিনী মিলে রিফাতকে বেধড়ক মেরে আহত করেছে। হামলা চলাকালীন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামসুল হক এবং শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি। উল্টো তারা শিশিরকে অফিসে ডেকে নিয়ে আপ্যায়ন করেছেন।

তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসা হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদনান সাকিব বলেন, হামলার ঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষ উপস্থিত থাকার পরেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে আমরা তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছি। দাবিগুলো কলেজের অধ্যক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু দাবি পূরণের বিষয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নওগাঁ জেলা ছাত্রদলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার শিশিরের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন ইসলাম বিন দোহা বলেন, শিশিরের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এরইমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হবে।

নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, কলেজে কিছু বহিরাগত ঢুকে বিশৃঙ্খলা করেছিল। ওই সময়ে আমি কলেজে উপস্থিত থাকলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। আমার পদত্যাগের যে দাবি করা হচ্ছে, আমি তাদেরকে বলবো তারা আমার পদত্যাগের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করুক। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রকার নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমি আমার পদ থেকে সরে দাঁড়াবোনা।

আরমান হোসেন রুমন/এসআর/জিকেএস