লোডশেডিং করার বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, লোডশেডিং হচ্ছে এবং হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হবে। শহর এবং গ্রামে সমানভাবে লোডশেডিং করা হবে।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে খুলনা অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
লোডশেডিং নিয়ে অনেকে ভুল তথ্য দেয় জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আমি অস্বীকার করছি না লোডশেডিং করা হচ্ছে। লোডশেডিং হচ্ছে এবং হবে। এনএলডিসি (ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার) ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো থেকে লোডশেডিংয়ের প্রকৃত তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তারা কতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছে আর তাদের চাহিদা কত, একটা হিসাব করলেই লোডশেডিং হচ্ছে কি না পাওয়া যাবে। আমি অনেক জায়গায় গিয়ে দেখেছি যে লোডশেডিং নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে।
Advertisement
তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে আপনার বাড়িতে বিদ্যুৎ না-ও থাকতে পারে। ট্রান্সমিটার নষ্ট থাকতে পারে। গত সরকারের আমলে নিম্নমানের পণ্য কিনেছে, এজন্য এগুলো বেশি হচ্ছে।
‘আমি অস্বীকার করছি না লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিং হচ্ছে এবং হবে।’
আরও পড়ুন
গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে: জ্বালানি উপদেষ্টা গ্রাম ও শহরে বৈষম্যহীন বিদ্যুৎ সরবরাহে হাইকোর্টের রুলশহরের চেয়ে গ্রামে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, শহর এবং গ্রামে আলাদা করে লোডশেডিং করা হবে না। আমরা পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছি, লোডশেডিং সমানভাবে করতে হবে।
Advertisement
ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা এখন সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। চাহিদা তো আরও বাড়বে। মূলত তাপমাত্রার ওপর এটি নির্ভর করছে। তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত যেতে পারে।
‘আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখন পুরোদমে চালাচ্ছি না, যখন চাহিদা বাড়বে তখন সেগুলো আরও চালানো হবে’- বলেন উপদেষ্টা।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা আরও বলেন, লোডশেডিং আমরা সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করবো। শহর এবং গ্রাম এলাকায় লোডশেডিং সমানভাবে বণ্টনের চেষ্টা করবো। বিষয়টি আমি আজ থেকে ব্যক্তিগতভাবে মনিটর করবো।
শহর এবং গ্রামাঞ্চলে কী পরিমাণ লোডশেডিং হচ্ছে, সে তথ্য তাকে জানানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা।
খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ যেটা দেখেছে সেটা হলো, আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল লাইনে একটা ফল্ট হয়েছে। দুটি তার একত্র হয়ে যাওয়ার ফলে কিন্তু এই জিনিসটা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ জেনারেশন ইউনিটগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দুই হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটের সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায় বলেও জানান বিদ্যুৎ উপদেষ্টা।
এরই মধ্যে সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহে এখন আর কোনো সমস্যা নেই বলেও জানিয়েছেন ফাওজুল কবির খান।
আরও পড়ুন
সৌরবিদ্যুতে ব্যাপক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করছি: আহসান খান চৌধুরী জাতীয় গ্রিডে ত্রুটি, দক্ষিণের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নতিনি বলেন, এর আগে বিপর্যয়ের সময় গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়ে আমরা জানতে চাইবো। সেগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কি না বা না হলে কেন হয়নি এ বিষয়গুলোও কমিটি দেখবে।
বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার জন্য সরকার ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে। এখন আমরা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় দুটি স্থানে এটা করছি। একটি ঈশ্বরদীতে ৩০ মেগাওয়াট আরেকটি ভুলতায় ৯০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের স্ট্যাবিলিটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল করিম আরও বলেন, আজ মেট্রোরেলের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। সেটার প্রধান করা হয়েছে অধ্যাপক শামসুল হক সাহেবকে। ওখানেও ইলেকট্রিক্যাল ইয়ে ছিল। ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ফল্টের জন্য এটি হয়নি। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, জিনিসটি মেরামত করতে পাঁচ মিনিট লেগেছে, কিন্তু লোক সেখানে যেতে দেড় ঘণ্টা লেগেছে।
তিনি বলেন, সেজন্য আমরা একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে সাড়া দিতে হবে। এজন্য লাইনের জায়গাটিকে আমরা ছয়টি ভাগে ভাগ করেছি।
আরএমএম/এমকেআর/এমএস