আন্তর্জাতিক বীজ দিবস উপলক্ষে উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় বীজ সম্পদ সুরক্ষা ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে বীজ বিনিময় করেছেন গ্রামীণ নারীরা।
Advertisement
শনিবার (২৬ এপ্রিল) সাতক্ষীরার শ্যামনগরে রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ধুমঘাটের তেরকাটির চকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় ধুমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ বীজ বিতরণ করেন তারা।
ধুমঘাট কৃষি প্রতিবেশ বিদ্যা শিখন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কৃষাণী অল্পনা রানী মিস্ত্রির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, উপকূলীয় শ্যামনগর অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়। তাই ফসল চাষাবাদও এখানকার কৃষকের নিত্যদিনের সংগ্রাম। প্রাকৃতিক বির্পযয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও লবণাক্ততার সঙ্গে সংগ্রাম করে ফসল উৎপাদনে কৃষকরা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন, তেমনি রয়েছে বীজ সংকট। কৃষকের হাতে কোনো বীজ নেই। বীজের জন্য কৃষককে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর দারস্থ হতে হচ্ছে। এতে কৃষক নিজের ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী না পারছে সময় মত বীজ বপন করতে, তার উপর বীজ ক্রয়ে গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। কৃষক হয়ে পড়ছে বাজার নির্ভরশীল ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর হাতের পুতুল। কৃষক স্বাধীন না হলে খাদ্য সার্বভৌমত্ব অর্জন সম্ভব নয়।
সভায় বারসিকের সহযোগী কর্মসূচি কর্মকর্তা বরষা গাইনের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বারসিকের সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার। এসময় শ্রীফলকাটি কৃষি প্রতিবেশ বিদ্যা শিখন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক গোবিন্দ মন্ডল, শাপলা নারীর উন্নয়ন সংগঠন ও স্বপ্ন-চূড়া যুব সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
বক্তারা বলেন, বীজ সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবহার, বিনিময় এবং বিক্রয় করা কৃষকের অধিকার। সেই অধিকার থেকে কৃষক দিন দিন বঞ্চিত হচ্ছেন। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার প্রভাব বেশি হওয়ায় কেনা বীজ অনেক সময় ফোটে না, আবার গাছ হয় কিন্তু ফল হয় না। ফলে বারবার বীজ কিনতে হয়, এতে তাদের ওপর মরার উপর খাড়ার ঘা প্রতিপন্ন হয়। এজন্য কৃষককে আরও বেশি স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণে সচেতন ও তৎপর হতে হবে। তাহলেই উৎপাদনে কৃষকের স্বাধীনতা ফিরবে।
বক্তারা আরও বলেন, বীজ শব্দটি ছোট হলেও পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্য এই বীজের উপর নির্ভরশীল। উৎপাদনের মূল উপাদান বীজ। কৃষি ফসল উৎপাদন বীজ ব্যতীত কল্পনা করা যায় না। কৃষকের বীজ কৃষকের অধিকার। কৃষক বাড়ি হোক বীজ ব্যাংক, হোক বীজ ভাণ্ডার।
মতবিনিময় শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে কৃষি প্রতিবেশ বিদ্যা শিখন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক অল্পনা রানী মিস্ত্রি স্থানীয় জাতের বীজ বিনিময় করেন।
আহসানুর রহমান রাজীব/এমএন/জেআইএম
Advertisement